আজকাল ওয়েবডেস্ক: আবারও সেই ওড়িশা। লাগাতার নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন এক কলেজ ছাত্রী। ফাঁকা বাড়িতে গায়ে আগুন জ্বালিয়ে জীবন শেষ করলেন তিনি। এবার নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তাঁর প্রেমিকের বিরুদ্ধে। বিজেপি শাসিত রাজ্যে সাম্প্রতিককালে এই নিয়ে তৃতীয়বার একইধরনের ঘটনা ঘটল। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে ওড়িশার কেন্দ্রপাড়া জেলায়। পুলিশ জানিয়েছে, পাট্টামুন্ডাই থানার অন্তর্গত বাদাপাড়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। ওই এলাকার বাসিন্দা এক কলেজ ছাত্রী অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। পরিবারের তরফে ওই ছাত্রীর প্রেমিকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। মানসিক নির্যাতন ও হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রীর প্রেমিকের বিরুদ্ধে। বারবার তাঁকে ব্ল্যাকমেল করা হত বলেও অভিযোগ জানিয়েছে পরিবার। 

পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার দিন বাড়িতে একাই ছিলেন ওই কলেজ ছাত্রী। গায়ে কেরোসিন ঢেলে, আগুন জ্বালিয়ে দেন তিনি। ফাঁকা বাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। পরিবারের অভিযোগ, লাগাতার মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন তরুণী। হেনস্থার ঘটনাটি ঘিরে আগেও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল পরিবার। কিন্তু সেই সময় বিষয়টি খতিয়ে দেখেনি পুলিশ। 

মৃত তরুণীর বাবার অভিযোগ, 'প্রেমিক দিনের পর দিন নির্যাতন করত মেয়েকে। ওকে ব্ল্যাকমেল করা হত। স্থানীয় থানায় আমরা অভিযোগ জানিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। অবশেষে চরম পদক্ষেপ করল মেয়ে।' 

আরও পড়ুন: আজও তুমুল বৃষ্টি, তোলপাড় হবে ১১ জেলা, টানা সাতদিন এই জেলাগুলিতে প্রবল দুর্যোগের সতর্কতা

প্রসঙ্গত, গত মাসেই ওড়িশার একাধিক কলেজ পড়ুয়া গায়ে আগুন জ্বালিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। কেন্দ্রপাড়ার ঘটনাটি এই নিয়ে তৃতীয়বার ঘটছে। এর আগে গত ১২ জুলাই ওড়িশার বালেশ্বরের ফকির মোহন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও এক ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ফকির মোহন কলেজের বি.এড-এর ছাত্রী ছিলেন এক তরুণী। ওই কলেজের হেড অব দ্যা ডিপার্টমেন্ট সমীর কুমার সাহুর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। পয়লা জুলাই কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান তরুণী। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, সাতদিনের মধ্যে তদন্ত করে, উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। কিন্তু সাতদিন পার করেও কলেজ কর্তৃপক্ষ অধ্যাপকের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেননি। বরং বিষয়টি নিয়ে কারও কোনও মাথা ব্যথা ছিল না। অবশেষে কলেজের মধ্যে প্রিন্সিপালের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান তরুণী ও তাঁর বন্ধুরা। 

কলেজের গেটের সামনে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন পড়ুয়ারা। দলে ছিলেন তরুণীও। হঠাৎ সকলের মাঝখান থেকে উঠে সোজা কলেজের করিডোরে চলে যান। সেখানে গিয়েই গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন। তাঁর শরীরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের লেলিহান শিখা দেখেই ছুটে আসেন সহপাঠীরা। তাঁরাও আগুন নেভাতে তোড়জোড় শুরু করেন। কয়েক মিনিট পর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। দুই দিন পরেই তরুণীর মৃত্যু হয়। 

এরপর গত ১৯ জুলাই ওড়িশার পুরী জেলার বালাঙ্গা থানার অন্তর্গত এলাকায় আরও একটি এমন ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ঘটনার দিন তিনজন বাইক আরোহী প্রথমে এক তরুণীকে অপহরণ করে। পরে তারা মেয়েটিকে ভরগবী নদীর তীরে নিয়ে যায়। বাইবর গ্রাম সংলগ্ন একটি নির্জন জায়গায় তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানেই তরুণীর গায়ে প্রথমে একটি দাহ্য পদার্থ ঢালে৷ এরপর তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা চেঁচামেচি শুনে তৎক্ষণাৎ সেখানে ছুটে যান। তাঁরা দ্রুত আগুন নিভিয়ে তরুণীকে উদ্ধার করেন। এরপর পিপিলির একটি স্থানীয় হাসপাতালে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় তরুণীকে। সেখানে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে এইমস (AIIMS)  ভুবনেশ্বরে নিয়ে যাওয়া হয়। তরুণীর অবস্থার অবনতি হওয়ায় রবিবার (২০ জুলাই) তাঁকে দিল্লির এইমসে এয়ারলিফ্ট করে নিয়ে যাওয়া হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য। গত সপ্তাহে তরুণীর মৃত্যু হয়েছে।