আজকাল ওয়েবডেস্ক: ওড়িশার অঙ্গুল জেলার একটি বনাঞ্চলে এক আদিবাসী মহিলাকে গণধর্ষণের অভিযোগে তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে দু’জন নাবালক। এই মর্মান্তিক ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিলেও, বিজেপি শাসিত ভারতে নারীদের বিরুদ্ধে হিংসা  ও অপরাধের ক্রমবর্ধমান গ্রাফ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।  মহিলার অভিযোগ অনুযায়ী, রবিবার (৪ আগস্ট) তিনি তাঁর ভাইপোকে সঙ্গে নিয়ে অঙ্গুলের ছেন্দিপাড়া এলাকার একটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। বিকাল ৩টার দিকে বাইকে করে ফেরার পথে পেট্রোল পাম্পে গাড়িতে জ্বালানি দিতে এবং খাবার খেতে থামেন তারা। এরপর মহিলা প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বনাঞ্চলে গেলে, সেখানে একটি ট্রাক্টরে করে তিন জন যুবক সেখানে পৌঁছায়। তারা মহিলাকে জোর করে মূল রাস্তা থেকে দূরে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করে। ঘটনার পর অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়। পরে মহিলা বাড়ি ফিরে পরিবারকে ঘটনা জানান।  ৫ আগস্ট তিনি পুলিশে অভিযোগ দাখিল করলে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ তিন জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে দু’জন নাবালক। অপরাধের সময় ব্যবহৃত ট্রাক্টর, দু’টি মোবাইল ফোন এবং অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীর পরিহিত জামাকাপড় জব্দ করা হয়েছে।  

আরও পড়ুন: টাকা তুলতে ব্যাঙ্কে ঢুকেই ক্যাশিয়ারের সামনে ঝুঁকলেন মহিলা, তারপর যা দেখা গেল! মূর্ছা গেল ক্যাশিয়ার! দাবানলের মতো ছড়াচ্ছে সেই ভিডিও

বিজেপি শাসনে নারীদের উপর ক্রমবর্ধমান অত্যাচার: 
এই ঘটনা ভারতে নারীদের বিরুদ্ধে বেড়ে চলা সহিংসতার আরও একটি উদাহরণ। কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের আমলে নারীদের উপর অত্যাচার, ধর্ষণ ও যৌন হিংসার ঘটনা লাফিয়ে বেড়েছে। এনসিআরবি-র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ধর্ষণের মামলা প্রায় ৪০% বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা:  

-হাথরাস কাণ্ড (২০২০): উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে এক দলিত তরুণীকে গণধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছিল। অভিযুক্তদের সাথে বিজেপি নেতাদের যোগসাজশের অভিযোগ ওঠে।  
- উনাও ধর্ষণ মামলা: উত্তরপ্রদেশের উনাওয়ে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেনগরকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।  
- মণিপুরের নৃশংসতা: ২০২৩ সালে মণিপুরে দুই আদিবাসী নারীকে নগ্ন করে প্যারেড করা হয়েছিল, যেখানে বিজেপি-সমর্থিত গোষ্ঠী জড়িত ছিল বলে অভিযোগ।  

নারীর বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে সরকারের "বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও" নীতির ব্যর্থতা স্পষ্ট। বেশিরভাগ মামলায় বিচার পেতে বছরখানেক লেগে যায়, অথবা অভিযুক্তরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মুক্ত হয়ে যায়। বিশেষ করে দলিত ও আদিবাসী নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচারের অভাব প্রকট।   স্থানীয় জনগণ ও নারী সংগঠনগুলি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা দ্রুত বিচার ও নারী সুরক্ষা কঠোর করার দাবি তুলেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বিজেপি সরকারের নারী নীতির ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেছে।   ওড়িশার এই ঘটনা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়, এটি ভারতজুড়ে নারীদের অনিরাপদ অবস্থারই প্রতিচ্ছবি। যতদিন না নারীদের সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, ততদিন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবেই।