আজকাল ওয়েবডেস্ক: ৭৯ বছর বয়সি এক বৃদ্ধকে ভুয়ো কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট দিয়ে ভুল চিকিৎসা করার অভিযোগে ছয় ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ২০২০ সালের৷ তাঁদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক হত্যা প্রতারণা এবং জালিয়াতি -সহ একাধিক গুরুতর ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। মহারাষ্ট্রের আহিল্যানগর জেলার ঘটনা। কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই চিকিৎসকেরা একটি ভুয়ো রিপোর্ট তৈরি করে ভুল চিকিৎসা করেছিলেন, যার ফলে রোগীর মৃত্যু হয়।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, গত ১৫ অক্টোবর বোম্বে হাই কোর্টের ঔরঙ্গাবাদ বেঞ্চের নির্দেশ মেনে টোপখানা থানায় এই মামলাটি পুনরায় দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত রোগীর দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। এমনকী, যে হাসপাতালে চিকিৎসা হয়েছিল, সেখানকার নথিতেও মৃতদেহটির কোনও রেকর্ড নেই। জানা গিয়েছে, মৃত ব্যক্তির ছেলে, অশোক খোকারালে ২০২২ সালে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, ২০২১ সালে জেলার সিভিল সার্জনের তদন্ত রিপোর্টে স্পষ্ট ভাবে চিকিৎসাজনিত গাফিলতির ইঙ্গিত থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কোনওরকম এফআইআর দায়ের করতে অস্বীকার করে।
খোকারালে একটি রিট পিটিশন দাখিল করে ওই তদন্ত রিপোর্টের একটি প্রতিলিপি চেয়ে নেওয়ার পরই অবশেষে কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়। সিভিল সার্জনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, মৃত বাবানরাও খোকারালে-কে সম্পূর্ণ পরীক্ষা না করেই কোভিডের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, "চিকিৎসার নথি ও ওষুধ বিতরণের তালিকা অনুযায়ী, রোগীকে ১৮ আগস্ট সকাল ১০টায় রেমডেসিভির ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল। অথচ তিনি ওই দিনই সকাল ৮:৩০ মিনিটে মারা গিয়েছিলেন।”
হাসপাতালের ২০ আগস্টের রিপোর্টে রোগীর মৃত্যুর কারণ হিসাবে 'কোভিড-১৯ নিউমোনাইটিস, সাইটোকাইন স্টর্ম এবং শ্বাসযন্ত্রের ব্যর্থতা' উল্লেখ করা হয়েছিল।
মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে আদালত পুলিশকে অবিলম্বে এফআইআর নথিভুক্ত করে বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। সেই নির্দেশ মেনে পুলিশ ছয় ডাক্তারের বিরুদ্ধে ৩০৪ ধারা (অপরাধমূলক হত্যা), ৪২০ ধারা (প্রতারণা) এবং ৪৬৮ ধারা (জালিয়াতি)-সহ আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করেছে। বর্তমানে পুরো ঘটনার তদন্ত জারি রয়েছে।
প্রসঙ্গত, করোনা এখনও যতেষ্ট উদ্বেগের, তেমনটাই জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে করোনা সংক্রমণে প্রায় ১০ হাজার লোক মারা গিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে একাধিকবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, কোভিড এখনও বড় ধরনের হুমকি হিসেবে বিবেচিত। চলতি বছরেই সংস্থাটি বলেছে, বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। বিশেষ করে উৎসবের সময়ে বড়ো জমায়েতের কারণে বিশ্বব্যাপী করোনার জেন-১ সংক্রমণ বেড়ে গেছে। সংস্থার প্রধান টেডরস গেব্রিয়াসিস আধাণম বলেছেন, কোভিড এখন আর বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্যের বিষয় না থাকলেও এটি এখনও ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টে পরিবর্তিত হচ্ছে এবং মানুষও মারা যাচ্ছে তাতে। গত নভেম্বরের তুলনায় গত ডিসেম্বরে বিশ্বে ১০ হাজার লোকের মৃত্যু ছাড়াও করোনায় আক্রান্ত রোগীর হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে ৪২ শতাংশ এবং জরুরি সেবা ইউনিটে ভর্তি বেড়েছে ৬২ শতাংশ। টেডরস আরও বলেন, এসব তথ্য মূলত ইউরোপ ও আমেরিকার ৫০টি দেশের। কিন্তু, নিশ্চিতভাবে অন্যান্য দেশেও এসব সংখ্যা বেড়েছে যার তথ্য এখানে আসেনি। সংস্থার প্রধান আরও বলেন, মহামারির সর্বোচ্চ চূড়ার তুলনায় ১০ হাজার লোকের মৃত্যুর সংখ্যাটি অনেক কম। কিন্তু প্রতিরোধযোগ্য এই মৃত্যুর সংখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি এখনও সকলকে মাস্ক পরার এবং সাবধানতা অবলম্বন করার কথা বলেছেন।
