আজকাল ওয়েবডেস্ক: মানুষের বেঁচে থাকার জন্য জল একটি অপরিহার্য উপাদান। তবে, অপব্যবহার এবং অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে দেশের বেশ কিছু অংশে জলের উৎসের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। ভূগর্ভস্থ জল ক্রমশ কমে যাচ্ছে। প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে অসংখ্য নদী নালা শুকিয়ে যায়। রাজস্থানের মতো রাজ্যে, এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামেও মহিলাদের সাধারণত ভারী পাত্র বহন করে প্রচণ্ড রোদে জলের সন্ধানে লড়াই করতে দেখা যায়।
অন্যদিকে, শহরাঞ্চলের মানুষ তাদের বাড়ির বাইরে বালতি নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে জলের ট্যাঙ্কারের জন্য অপেক্ষা করছে। আজও, অনেক মানুষকে দেখা যায় তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের জলের চাহিদা মেটাতে জলের ট্যাঙ্কারের উপর নির্ভর করছেন। এই জল সঙ্কট কেবল একটি ঘাটতি নয়- এটি লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য একটি আসন্ন বিপর্যয়। খুব দেরি হওয়ার আগেই তাৎক্ষণিক এবং সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ না নিলে বিপদ অনিবার্য।
আরও পড়ুন: আর থাকছে না শেখ হাসিনার ‘গণভবন’! চরম সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলল ইউনূস সরকার
নীতি আয়োগের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের ২০টি শহর তীব্র জল সঙ্কটের মুখোমুখি হতে পারে। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম নীতি আয়োগের রিপোর্টকে উল্লেখ করে তাদের প্রতিবেদনে দাবি করেছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের জলের চাহিদা সরবরাহের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি হবে। এছাড়াও রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের ৪০ শতাংস জনগণের কাছে পানীয় জল উপলব্ধ থাকবে না।
রিপোর্টে বলা হয়েছে যে দিল্লি, গান্ধীনগর এবং যমুনানগর ভবিষ্যতে তীব্র জল সঙ্কটের মুখোমুখি হবে। এছাড়াও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে যে, গুরুগ্রাম, বেঙ্গালুরু, ইন্দোর এবং রতলমেও ২০৩০ সালের মধ্যে জল সঙ্কট দেখা দেবে।

নীতি আয়োগের তালিকায় অমৃতসর, জলন্ধর এবং লুধিয়ানাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও, আগ্রা, পাতিয়ালা, হায়দ্রাবাদ এবং চেন্নাই হল অন্যান্য শহর যা ২০৩০ সালের মধ্যে জল সঙ্কটের মুখোমুখি হতে পারে। এছাড়াও জয়পুর, গাজিয়াবাদ, ভেলোর, আজমির, মোহালি এবং বিকানেরের মতো শহরও রয়েছে তালিকায়।
পিআইবি প্রেস বিজ্ঞপ্তি (৯ ডিসেম্বর, ২০১৯) অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জুন মাসে নীতি আয়োগ কর্তৃক প্রকাশিত ‘কম্পোজিট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট ইনডেক্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে ভারত তার ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ জল সঙ্কটের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ৬০ কোটি মানুষ উচ্চ থেকে চরম জল সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে। রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে জলের গুণমান সূচকে ১২২টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১২০তম, যেখানে প্রায় ৭০% জল দূষিত।
জলের অপচয়ের কারণে আজ বিশুদ্ধ জলের মাত্রা অনেকাংশে কমে যাচ্ছে। আর যার ফলে মানুষকে জল ঘটিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ওয়াটার ডেভলপমেন্ট রিপোর্ট ২০২৩ অনুযায়ী, এই সমস্যার সমাধানের কথা তুলে ধরা হয়। এই ব্যবস্থাকে বাস্তবায়িত করতে হলে বছরে আনুমানিক ৬০০ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে বলে অনুমান।
পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধি, শিল্প, আর্থ সামাজিক উন্নয়ন প্রভৃতির জন্য জলের ব্যবহার প্রতি বছর ১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে,আশঙ্কা করা হচ্ছে ২০৫০ সালে এই হারে বৃদ্ধি পেলে জল সংকট আরও বাড়তে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। সারা বিশ্বে যা জল আছে তার ৭০ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজেই ব্যবহার করে, ফলে এখান থেকেও জলের ঘাটতি তৈরি হয়, তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন ড্রিপ সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষিকাজ করলে অনেকটা জল সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।
জাতিসংঘের সম্মেলনে প্রকাশিত নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে বিশ্বের ২৬ শতাংশ মানুষের নিরাপদ পানীয় জলের পরিমাণ অনেকাংশে কমে গিয়েছে। ৪৬ শতাংশ মৌলিক স্যানিটেশনের অভাব রয়েছে। রাষ্ট্র সংঘের প্রাথমিক লক্ষ্য হল, ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য পরিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ ও স্যানিটাইজেশন এর ব্যবস্থা চালু করা।
গত ৪০ বছরে বিশ্বব্যাপী জলের ব্যবহার প্রায় এক শতাংশ প্রতি বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০৫০ সাল পর্যন্ত এই একই হারে জলের ব্যবহার বাড়বে তা অনুমান করা যায়। বিশ্বের এমন কিছু দেশ আছে যে দেশগুলিতে পানীয় জলের পরিমাণ একদমই কম, যেমন- লেবানন, কুয়েত, সৌদি আরব। তাই আগামী দিনে সব থেকে বেশি যার দাম বাজারে হবে তার নাম জল। এর দাম হবে হাজার হাজার টাকা।
