আজকাল ওয়েবডেস্ক: গরু চোর সন্দেহে তিন বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল ত্রিপুরায়। বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে ত্রিপুরার খোয়াই জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বিদ্যাবিল গ্রামে। বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে তিন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা।
বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “২০২৫ সালের ১৫ অক্টোবর ভারতের ত্রিপুরায় একদল জনতার দ্বারা তিন বাংলাদেশী নাগরিককে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।”
তিনজনকে চোর সন্দেহে খুনের ঘটনার নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করার দাবি তুলেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এ ধরনের অমানবিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বানও জানোনো হয়েছে নয়াদিল্লির কাছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই জঘন্য কাজটি মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের গুরুতর লঙ্ঘন। বাংলাদেশ সরকার এই নিন্দনীয় ঘটনার প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং ভারত সরকারের প্রতি এই ঘটনার অবিলম্বে, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত পরিচালনা এবং এই ধরনের অমানবিক কাজের পুনরাবৃত্তি বন্ধে আন্তরিক প্রচেষ্টা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে।”
আরও পড়ুন: ‘সীমান্তে নোংরা খেলা খেলতে পারে ভারত’, আফগানিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষের মাঝেই আশঙ্কা পাকিস্তানের
বাংলাদেশ আরও বলেছে, “অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশ সরকার জোর দিয়ে বলেছে যে, সকল ব্যক্তি, তাদের জাতীয়তা নির্বিশেষে, তাদের মানবাধিকারের পূর্ণ সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী, তাঁরা অসাবধানতাবশত সীমান্তের যে প্রান্তেই থাকুক না কেন।”

জানা গিয়েছে, গত ১৫ অক্টোবর ত্রিপুরার খোয়াই জেলার কারেঙ্গিছড়া এলাকায় তিন বাংলাদেশি ঢুকে বসবাস শুরু করেছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের চোর সন্দেহে গণপিটুনি দেয় বলে অভিযোগ। এরপর তাঁদের তির মেরে হত্যা করা হয়। পরে ভারতীয় পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার বিদ্যাবিল সীমান্ত থেকে উদ্ধার হওয়া ওই তিনটি মৃতদেহ খোয়াই পাহারমুড়া সীমান্তের ১২ নং গেট দিয়ে চাম্পাহাওর থানার পুলিশ ১০৪ নং ব্যাটেলিয়ান বিএসএফের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৫৫ নং ব্যাটালিয়ান বিজিবি ও চুনারুঘাট থানার ওসির হাতে হস্তান্তর করে।
আরও পড়ুন: দীর্ঘ ২৪ বছর পর গাজায় মুক্তির আনন্দ ও বেদনা একসঙ্গে, যুদ্ধ কি থামবে? রয়েছে আশঙ্কাও
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে একটি রাবার বাগানে দুই গ্রামবাসী কাজ করার পর এই ঘটনা ঘটে। তাঁরা এলাকা থেকে গরু নিয়ে আন্তর্জাতিক সীমান্তের দিকে তিনজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আসতে দেখেন। সন্দেহভাজন চোরদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তাঁরা। এর পরেই আচমতা ওই তিন বাংলাদেশী স্থানীয়দের উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে বলে অভিযোগ। এই হামলায় দুই ভারতীয় জখম হন। আহত দু’জন ঘটনাটি অন্যদের জানালে, ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। সন্দেহভাজন বাংলাদেশি চোরদের তাঁরা ঘিরে ধরেন এবং তাঁদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
ত্রিপুরার সাথে বাংলাদেশের ৮৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। সীমান্ত লাগোয়া এলাকাগুলিতে আন্তঃসীমান্ত অপরাধ, যেমন গরু পাচার এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও সীমান্তের বেশিরভাগ অংশ বেড়া দিয়ে ঘেরা, অনুপ্রবেশকারী এবং গরু পাচারকারীরা প্রায়শই লুকিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।
