আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইউক্রেনের উপরে রাশিয়ার হামলা বন্ধ করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিছু কঠোর পদক্ষেপ করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হল ভারতের উপরে অতিরিক্ত শুল্ক চাপানো। রবিবার এক সাক্ষাৎকারে খোলসা করে দিয়েছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। অর্থাৎ রাশিয়াকে চাপে ফেলতেই ভারতের উপরে অতিরিক্ত শুল্কের বোঝা চাপিয়েছে ওয়াশিংটন।

এনবিসি নিউজের 'মিট দ্য প্রেস'- অনুষ্ঠানে ভ্যান্স বলেছেন যে, আমেরিকার লক্ষ্য হল রাশিয়া যাতে তেল বিক্রি করে বেশি লাভ করতে না পারে। ভ্যান্স বলেছেন, "ট্রাম্প আক্রমণাত্মক অর্থনৈতিক নীতি প্রয়োগ করেছেন, উদাহরণস্বরূপ ভারতের উপর ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, রুশদের তেল বেচে অর্থনীতিতে পোক্ত করার প্রয়াস বন্ধ করতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।" 

পাশ্চাত্যের দেশগুলি রাশিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপালেও ভারত রাশিয়ার থেকে কম দামে তেল কিনছে। ওয়াশিংটন মনে করে, ভারত রাশিয়ার থেকে কম দামে তেল কিনে পরোক্ষভাবে ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করছে। 

সাক্ষাৎকারে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট্রের কাছে প্রশ্ন ছিল, কঠোর মার্কিন শুল্ক নীতির জের রাশিয়া কীভাবে প্রভাবিত হচ্ছে? জবাবে তিনি বলেন, "যদি রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করে, তাহলে তারা বিশ্ব অর্থনীতিতে আবার ফিরতে পারবে। কিন্তু যদি হামলা অব্যাহত রাখে, তাহলে তারা আলাদাই থাকবে।"

ওয়াশিংটন বারবার ভারতের সমালোচনা করলেও, রাশিয়ার তেলের বৃহত্তম ক্রেতা চীন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন চিনের উপরে কোনও কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এর ফলে ভারতের উপরে শুল্ক আরোপ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। 

ভারত বারবার রাশিয়ার তেল আমদানিকে 'জাতীয় স্বার্থ রক্ষা' বলে দাবি করেছে। পুরটাই বাজার অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানানো হয়েছে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণের পর পশ্চিমা দেশগুলি রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে মুখ ফিরিয়েছিল। সেই সুযোগ কাজে লাগায় নয়াদিল্লি। বিশেষ ছাড়ে বিক্রি হওয়া রাশিয়ান তেল কেনার দিকে মনোনিবেশ করে ভারত।

শনিবার, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের নেতাদের তীব্র সমালোচনা করে দৃঢ়ভাবে বলেছেন যে, "ভারত থেকে পরিশোধিত তেল বা সম্পর্কিত পণ্য কিনতে কাউকে বাধ্য করা হয়নি। জয়শঙ্কর বলেছেন, "যারা নিজেদের বাণিজ্য সমর্থক বলে দাবি করে, তারাই অন্যদের উপরে বাণিজ্যের অভিযোগ আনছে। এটা খুবই হাস্যকর। যদি ভারত থেকে শোধিত তেল বা অন্য কোনও পণ্য কিনতে সমস্যা হয়, তাহলে কিনবেন না। কেউ আপনাদের জোর করছে না। কিন্তু ইউরোপ ও আমেরিকা যখন নিজেরাই আমাদের থেকে পণ্য কিনছে, তখন এইসব কথা বলা ঠিক নয়।" এই শুল্কের চাপ সত্ত্বেও, ভ্যান্স ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আশাবাদী। তাঁর দাবি, ‘রাশিয়া কিছু বিষয় নিয়ে একটু সুর নরম করেছে, যা তারা গত সাড়ে তিন বছরে করেনি।"

তবে সাক্ষাৎকারের শেষ ভ্যান্স আশার কথাও শুনিয়েছেন। বলেছেন যে, "আমি মনে করি রাশিয়ানরা এই সংঘাতের সাড়ে তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি মনোভাব নরম করেছে, তারা তাদের বেশ কয়েকটি মূল দাবিতে নমনীয় হতে ইচ্ছুক।"  

আরও পড়ুন- 'ভাল দামে পেলেই তেল কিনবে ভারত' রাশিয়ায় সাফ দাবি ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের, ট্রাম্পকে বড় বার্তা...