আজকাল ওয়েবডেস্ক: আমেরিকাভিত্তিক বিনিয়োগ সংস্থা জেফারিজ তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই উন্নয়নের ক্ষেত্রে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীনের মডেলকেই বেশি কার্যকর ও টেকসই বলে মনে করছে। প্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, চীন শক্তি উৎপাদন সক্ষমতা ও ওপেন-সোর্স উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এমন কিছু কাঠামোগত সুবিধা গড়ে তুলেছে, যা ভবিষ্যতের এআই দৌড়ে দেশটিকে এগিয়ে রাখবে।
ওপেন-সোর্স মডেল: উদ্ভাবনের জোয়ার
জেফারিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের ওপেন-সোর্স ভিত্তিক পদ্ধতি উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। এই মডেলের ফলে স্থানীয় উদ্যোক্তারা তুলনামূলক কম খরচে, নির্দিষ্ট ও বাস্তবধর্মী এআই অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে পারছেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, “ওপেন-সোর্স মডেল এমন এক ইনফারেন্স বুম তৈরি করবে যেখানে উদ্যোক্তারা লক্ষ্যনির্ভর ও সাশ্রয়ী এআই ব্যবহারের ক্ষেত্র তৈরি করবেন।”
এই পদ্ধতির মূল সুবিধা হল এটি প্রযুক্তি উদ্ভাবনকে সীমিত কোম্পানির হাতে না রেখে সবার জন্য উন্মুক্ত রাখে। ফলে ছোট-বড় স্টার্টআপগুলোও নতুন এআই প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারছে।
জ্বালানি ক্ষমতায় চীনের বিশাল অগ্রগতি
এআই প্রযুক্তির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিদ্যুৎ বা জ্বালানি খরচ। ডেটা সেন্টার ও হাই-পারফরম্যান্স কম্পিউটিং অবকাঠামো বিপুল পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে। এই প্রেক্ষাপটে জেফারিজ বলছে, চীন এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক বড় সুবিধায় আছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে চীনের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে ৪২৬ গিগাওয়াট, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একই সময়ে নতুন স্থাপন ও পুরনো ইউনিটের অবসর বিবেচনায় নিট বৃদ্ধি ছিল মাত্র ৩০ গিগাওয়াট।
জেফারিজের ভাষায়, “চীন প্রায় সীমাহীন পরিমাণ সস্তা জ্বালানির অ্যাক্সেস রাখে, যা এআই অবকাঠামো গড়ে তুলতে তাদের জন্য বিশাল সুবিধা।” এই শক্তি প্রাচুর্যের কারণে চীন তার ডেটা সেন্টার, সার্ভার ফার্ম ও ক্লাউড ইনফ্রাস্ট্রাকচার আরও দ্রুত সম্প্রসারিত করতে পারছে। অপরদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শক্তি ব্যয়ের বৃদ্ধি এবং কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা অনেক সময় প্রযুক্তি প্রকল্পের গতি কমিয়ে দেয়।
তবে জেফারিজ সতর্ক করে বলেছে, এআই-সম্পর্কিত মূলধনি ব্যয় বা ক্যাপেক্স বুম ভবিষ্যতে এক ধরণের অতিবিনিয়োগের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, “বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছে, যাতে তারা পিছিয়ে না পড়ে। কিন্তু এই ধারা শেষ পর্যন্ত ডেটা সেন্টার ও অনুরূপ অবকাঠামোয় অতিরিক্ত বিনিয়োগের দিকে নিয়ে যেতে পারে।”
অর্থাৎ, এআই শিল্প এখন এমন এক প্রতিযোগিতার পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে প্রতিটি বড় সংস্থা ভয়ে—‘যদি পিছিয়ে পড়ি’—বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢালছে।
কে জিতবে এআই দৌড়ে?
প্রতিবেদনটি শেষ হয়েছে এক বাস্তবধর্মী মন্তব্যের মাধ্যমে—এখনও স্পষ্ট নয়, এআই দৌড়ে চূড়ান্ত বিজয়ী কে হবে। জেফারিজ জানিয়েছে, “এখনও এমন কোনও ‘কিলার অ্যাপ’ তৈরি হয়নি যা সাধারণ মানুষের জীবনে এআই-এর চূড়ান্ত প্রয়োগ নির্ধারণ করতে পারে।”
অর্থাৎ, চীন তার ওপেন-সোর্স উদ্ভাবন ও সস্তা জ্বালানির সুবিধা নিয়ে এগোলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও গবেষণা ও উচ্চ উদ্ভাবনে ভাল অবস্থানে আছে। তবে আপাতত জেফারিজের দৃষ্টিতে, চীনের মডেলই ভবিষ্যতের এআই অগ্রগতির জন্য বেশি উপযোগী ও বাস্তবসম্মত পথ।
