আজকাল ওয়েবডেস্ক: যদি কানাডার কিশোর-কিশোরীদের জিজ্ঞাসা করা হয়—“জলবায়ু পরিবর্তন তাদের কেমন লাগছে?”—তবে বেশিরভাগই রাখঢাক না করে স্পষ্ট উত্তর দেবে। আথাবাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নতুন সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী ৮০০ জন তরুণ-তরুণীর মধ্যে ৩৭ শতাংশ জানিয়েছে, উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে সরাসরি প্রভাব ফেলছে।
এই কিশোররা তাদের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করেছে—কেউ বলেছে তারা উদ্বিগ্ন ও মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে, আবার কেউ বলেছে, ভবিষ্যৎ নিয়ে অনবরত চিন্তায় ভুগছে। একজন অংশগ্রহণকারী লিখেছেন, “আমি এখনই ভাবছি ভবিষ্যতে সন্তান নেব কি না, কারণ পৃথিবী তো ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে।”
এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন পোস্টডক্টরাল ফেলো ড. ইশ্বর তিওয়ারি, সহ-লেখক হিসেবে ছিলেন ড. জিনা মার্টিন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল এমন কিছু করা যা খুব কমই আগে হয়েছে—কিশোরদের নিজেদের ভাষায় শোনা, জলবায়ু পরিবর্তন তাদের দৈনন্দিন জীবনে কীভাবে ছাপ ফেলছে।
ড. মার্টিন বলেন, “আমরা দেখছি, তরুণদের অনুভূতির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। কিন্তু আমরা চেয়েছিলাম বুঝতে—তাদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে।”
আরও পড়ুন: বিনিয়োগেই মিলবে সুফল, দেখে নিন এই মিউচুয়াল ফান্ডগুলির সুদের হার
গবেষণার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এই উদ্বেগ আর দূরবর্তী কোনও বিমূর্ত ভাবনা নয়—এটি গভীরভাবে ব্যক্তিগত হয়ে উঠেছে। কিশোররা শুধু “ডুম-স্ক্রোলিং” বা ভবিষ্যতের ভয় নয়, বরং বাস্তব ঘটনার সঙ্গে তাদের মানসিক চাপকে যুক্ত করেছে—ধোঁয়ায় ভরা আকাশ, অতিরিক্ত তাপ সতর্কতা, বন্যায় ডুবে যাওয়া রাস্তাঘাট, কিংবা বাতিল হয়ে যাওয়া খেলাধুলার অনুশীলন।
তাদের কথায়, মানসিক ও শারীরিক চাপের সীমারেখা মুছে যাচ্ছে। অনেকেই বলেছেন, বন্যা বা দাবানলের সিজনে ঘুমাতে সমস্যা হয়; কেউ কেউ জানিয়েছেন মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা ক্লান্তির মতো উপসর্গ। যদিও সমীক্ষায় শারীরিক অসুস্থতার প্রশ্ন করা হয়নি, তবুও অংশগ্রহণকারীরা নিজেরাই সেই সম্পর্ক টেনে এনেছেন।
মার্টিন বলেন, “এটা দেখায় যে, তারা নিজেরাই সংযোগটা করছে। যখন তুমি ফুসফুসে ধোঁয়া টের পাও, তখন জলবায়ু পরিবর্তন আর দূরের কোনও ধারণা থাকে না।” এই গবেষণা আরও প্রকাশ করেছে, কিশোরদের মধ্যে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে ভবিষ্যৎ নিয়ে—চাকরি, বাড়ি, কিংবা তাদের শহর আগামী দশ বছরে বাসযোগ্য থাকবে কি না, সেই প্রশ্ন তাদের ঘিরে ধরছে। কেউ কেউ এমনকি পরিবার গঠন নিয়েও দ্বিধায় ভুগছে।
এই অনিশ্চয়তা কেবল উদ্বেগ বাড়ায় না, এটি কিশোরদের পরিকল্পনা, পড়াশোনা ও স্বপ্ন দেখার ধরণকেও বদলে দেয়। সমীক্ষার আরেকটি শক্তিশালী দিক হল এর ব্যাপ্তি—এটি কানাডার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত কিশোরদের অন্তর্ভুক্ত করেছে, শহর, গ্রাম ও দূরবর্তী অঞ্চল—সব জায়গা থেকেই মতামত সংগ্রহ করা হয়েছে।
ড. মার্টিনের ভাষায়, “কেউ যদি উত্তরের দাবানলে সরাসরি প্রভাবিত হয়, আর কেউ শহরে বসে গরমের সতর্কতা দেখে—তাদের অভিজ্ঞতা আলাদা হলেও দুজনেরই অনুভূতি সত্যি ও সমান গুরুত্ব পাওয়া উচিত।”
তরুণদের প্রতিক্রিয়া চারটি বড় থিমে ভাগ করা যায়—প্রথমত, মানসিক প্রভাব: উদ্বেগ, ভয়, দুঃখ ও অসহায়ত্ব; দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা: পড়াশোনা, কাজ ও জীবনের স্থিতিশীলতা নিয়ে দুশ্চিন্তা; তৃতীয়ত, পরিবেশ ও মানবজাতির প্রতি শোক: প্রকৃতির ক্ষয় ও ভবিষ্যতের ভয়; এবং চতুর্থত, দৈনন্দিন জীবনের বিঘ্ন: ঘুমের সমস্যা, মনোযোগের অভাব, কিংবা পরিকল্পনা করতে না পারার অস্বস্তি।
প্রথমত, যদি তরুণরা বলে জলবায়ু পরিবর্তন তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে—তাহলে সেটি বিশ্বাস করতে হবে। দ্বিতীয়ত, মানসিক স্বাস্থ্যের সহায়তা ব্যবস্থাকে জলবায়ু পরিকল্পনার অংশ করতে হবে—যেভাবে আমরা তাপপ্রবাহ বা বন্যার প্রস্তুতি নিই, সেভাবে।
