আজকাল ওয়েবডেস্ক: কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত বিরোধের কারণে থাইল্যান্ড গত কয়েকদিন ধরেই খবরের শিরোনামে। অনেকেরই ধারণা পর্যটন থাইল্যান্ডের অর্থনীতির মূল ভিত্তি, কিন্তু এটি অর্ধসত্য।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি বহুমুখী অর্থনীতির অধিকারী। এখানে পর্যটনের পাশাপাশি কৃষি, রপ্তানি, শিল্প এবং অন্যান্য পরিষেবা ক্ষেত্রও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। থাইল্যান্ডের জিডিপিতে পর্যটনের অংশ প্রায় ২০ শতাংশ হলেও, অন্যান্য খাত এর চেয়েও বড় ভূমিকা পালন করে। বিশ্বের অনেক অংশে একটি বিশ্বাস রয়েছে যে থাইল্যান্ড বডি ম্যাসাজ এবং অনুরূপ ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত, তবে এটি মোটেও সত্য নয়। আসুন এই প্রতিবেদনে জেনে নেওয়া যাক থাইল্যান্ড অন্যান্য কোন শিল্প থেকে আয় করে।
থাইল্যান্ড বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক দেশ। এর ‘জাসমিন চাল’ আন্তর্জাতিক বাজারে খুবই জনপ্রিয়। এর পাশাপাশি রাবার, ফল, সামুদ্রিক পণ্য এবং ভুট্টাও প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়। দেশের জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ জনসংখ্যা কৃষির উপর নির্ভরশীল। একই সঙ্গে, মাছ চাষ দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করে। চিংড়ি, স্কুইড এবং মাছের বিশাল রপ্তানিও হয়।
থাইল্যান্ডের অর্থনীতির প্রায় ৬০ শতাংশ আসে রপ্তানি থেকে। দেশটি চীন, জাপান, আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে কৃষি পণ্য, অটোমোবাইল এবং ইলেকট্রনিক্স রপ্তানি করে। পর্যটনও আয়ের একটি প্রধান উৎস। ২০২৪ সালে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন বিদেশী পর্যটক দেশে এসেছিলেন। যার ফলে প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল। স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষ করে চিকিৎসা পর্যটন, দেশটিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে।

থাইল্যান্ডকে ‘এশিয়ার ডেট্রয়েট’ বলা হয় কারণ এখানে জাপানি, আমেরিকান এবং ইউরোপীয় কোম্পানিগুলির অটোমোবাইল প্ল্যান্ট রয়েছে। টয়োটা, হোন্ডা, ফোর্ড এবং ইসুজুর মতো কোম্পানিগুলি বৃহৎ পরিসরে যানবাহন তৈরি করে। ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এবং টেক্সটাইলও থাইল্যান্ডের শিল্প শক্তির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ব্যবসা-বান্ধব নীতির কারণে থাইল্যান্ড বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। জাপান, আমেরিকা এবং চীনের অনেক সংস্থা এখানে বিনিয়োগ করছে। এছাড়াও, প্রাকৃতিক গ্যাস, টিন এবং টাংস্টেনের মতো খনিজ পদার্থের উৎপাদন শিল্পোন্নয়নকে উৎসাহিত করেছে।
থাইল্যান্ড, যার ঐতিহাসিক নাম শ্যামদেশ বা সিয়াম এবং দাপ্তরিক নাম থাই রাজ্য। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৫, ১৩, ১২০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত ৭ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশ। এর উত্তরে মায়ানমার ও লাওস, পূর্বে লাওস ও কম্বোডিয়া, দক্ষিণে থাইল্যান্ড উপসাগর ও মালয়েশিয়া এবং পশ্চিমে আন্দামান সাগর ও মায়ানমার অবস্থিত। এছাড়াও দক্ষিণ-পূর্বে ভিয়েতনামের সঙ্গে এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের সঙ্গে থাইল্যান্ড সামুদ্রিক সীমান্ত ভাগ করে। ২০১৯ সাল থেকে থাইল্যান্ড একটি সংসদীয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। তবে বাস্তবে সংবিধানের কাঠামোগত সুবিধাগুলো ক্ষমতায় সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণকে সুনিশ্চিত করেছে। ব্যাংকক দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। থাইল্যান্ড একমাত্র দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রাষ্ট্র যা যুদ্ধকালীন সময় ব্যতীত কখনও কোন ইউরোপীয় বা বিদেশী শক্তির নিয়ন্ত্রণে ছিল না। ১৭৮২ সাল থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত দেশটিতে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল। ১৯৩২ সালে বিদ্রোহীরা একটি অভ্যুত্থান ঘটায় এবং দেশে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। তখন থেকে আজ পর্যন্ত থাইল্যান্ড বহু সামরিক ও বেসামরিক সরকারের অধীনে শাসিত হয়েছে। ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত দেশটি শ্যামদেশ নামে পরিচিত ছিল। ঐ বছর এর নাম বদলে থাইল্যান্ড রাখা হয়।
