আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার আবহে ভারত সিন্ধু জলচুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে এবং বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলেরও নজরে এসেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ একে ‘একতরফা ও বেআইনি’ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সিন্ধু নদী ও তার গুরুত্বপূর্ণ উপনদীগুলি—চন্দ্রভাগা (ঝেলম) এবং বিতস্তা (বিয়াস)—পাকিস্তানের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির প্রাণরেখা। ভারতের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এই নদীগুলির প্রবাহে আশঙ্কাজনক হারে জলস্তর হ্রাস পাচ্ছে। পাকিস্তানের পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (WAPDA)-এর তথ্যানুসারে, মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চন্দ্রভাগা নদীর প্রবাহ ৯১,০০০ কিউসেক কমেছে, যা মারাত্মক জলসংকটের পূর্বাভাস দিচ্ছে।

পাকিস্তানের ইন্ডাস রিভার সিস্টেম অথরিটি (IRSA) জানায়, মংলা ও তারবেলা জলাধারে জলসঞ্চয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। বর্তমানে এই দুটি প্রধান জলাধারে সংরক্ষিত জল প্রায় অর্ধেক পর্যায়ে পৌঁছেছে। IRSA-র রিপোর্ট অনুযায়ী, অঞ্চলটিতে নদীগুলির মোট প্রবাহ ২১ শতাংশেরও বেশি কমেছে। এই হঠাৎ জলসঙ্কট সরাসরি প্রভাব ফেলেছে পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও সিন্ধ প্রদেশের কৃষিকাজে। এই এলাকাগুলিতে সেচের একমাত্র উৎস এই নদী ও জলাধারগুলি। একই সঙ্গে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনেও ব্যাঘাত ঘটছে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলতে পারে।

উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান সিন্ধু নদীর জল বণ্টন সংক্রান্ত যে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করে, সেটি এতদিন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে জলসম্পদ ব্যবস্থাপনার ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। কিন্তু সম্প্রতি পহেলগাঁওয়ে সংঘটিত জঙ্গি হামলার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং এরপরই চুক্তি কার্যত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মন্তব্য করেন, “জল ও রক্ত একসাথে বইতে পারে না।”

পাকিস্তান অবশ্য হামলার সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে। এদিকে মংলা জলাধারে ৫৯ লক্ষ একর-ফুট ধারণক্ষমতার বিপরীতে বর্তমানে জল রয়েছে মাত্র ২৭ লক্ষ একর-ফুট। তারবেলা জলাধারের পরিস্থিতিও আশঙ্কাজনক—সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতার তুলনায় বর্তমানে জলের পরিমাণ অর্ধেকের কিছু বেশি। যদিও আসন্ন বর্ষাকাল কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে, তবে তৎপরতার সঙ্গে ব্যবস্থাপনা না নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এই প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে চুক্তির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।