আজকাল ওয়েবডেস্ক: জাপানের এক গবেষকদল ফাইবার অপটিক্সে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে। তারা এক প্রকারের নতুন অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করে প্রায় ১,১২৩ মাইল দূরত্বে ১.০২ পেটাবিট প্রতি সেকেন্ড ডেটা স্পিড অর্জন করেছে। এই সাফল্যে ১.৮৬ এক্সাবিট প্রতি সেকেন্ড–প্রতি মাইল ক্যাপাসিটি–ডিস্ট্যান্স প্রোডাক্ট পাওয়া গেছে।
এই ট্রান্সমিশন পরীক্ষা ও সিস্টেম উন্নয়ন নেতৃত্ব দেন জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস টেকনোলজি –এর প্রধান গবেষক হিদেয়াকি ফুরুকাওয়া।
আরও পড়ুন: স্বপ্নের দেশের বাসিন্দা হতে চাইলে মানতে হবে সামান্য নিয়ম, তাহলেই কেল্লাফতে
নতুন কেবলটিতে একটি মাত্র ক্ল্যাডিংয়ের ভেতরে ১৯টি আলোর পথ রয়েছে। বাইরের ব্যাস মাত্র ০.০০৫ ইঞ্চি, যা বর্তমানে ব্যবহৃত লাইনগুলোর সমান। তাই এটি বিদ্যমান নেটওয়ার্কে সহজেই বসানো যায়। সব কোর একই গ্লাস ক্ল্যাডিং ভাগ করে নেয় এবং এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে আলোর পথগুলো একরকম থাকে। এর ফলে পাওয়ারের ওঠানামা কম হয় এবং C ব্যান্ড ও L ব্যান্ড–এ ক্ষতি হ্রাস পায়।
অসংযুক্ত মাল্টিকোর ফাইবারে কোরগুলোর মাঝে বেশি দূরত্ব রাখায় সিগন্যাল লস বাড়ে। কিন্তু এই কাপলড লেআউট–এ কোরগুলোর মাঝে সিগন্যাল মিশতে দেওয়া হয়, পরে রিসিভারে ডিজিটাল প্রসেসিং ব্যবহার করে সেগুলো আলাদা করা হয়। কম ফাইবার লস, বিস্তৃত তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ব্যবহার, এবং পূর্বানুমেয় কাপলিংয়ের ফলে একই সঙ্গে দীর্ঘ দূরত্ব ও উচ্চ গতি অর্জন সম্ভব হয়েছে।
আগে বিভিন্ন প্রকল্পে উচ্চগতির সিগন্যাল পাওয়া গিয়েছিল, তবে তা ছোট দূরত্বে সীমাবদ্ধ ছিল। এবার একসঙ্গে গতি ও দূরত্বে সাফল্য এসেছে। মাল্টিকোর ফাইবার–এ একাধিক কোর একই ক্ল্যাডিংয়ের মধ্যে রাখা হয়, যাতে সমান্তরালভাবে একাধিক সিগন্যাল যাতায়াত করতে পারে। MIMO (মাল্টিপল ইনপুট মাল্টিপল আউটপুট) হল এক ধরনের ডিজিটাল ফিল্টার, যা মিশ্রিত সিগন্যালগুলো আলাদা করে মূল ডেটা ফিরিয়ে আনে। দীর্ঘ দূরত্বের অপটিক্যাল লিঙ্কে C ব্যান্ড ও L ব্যান্ড ব্যবহার হয়, কারণ সাধারণ অ্যাম্প্লিফায়ার এগুলোতে কার্যকরভাবে কাজ করে। ১৬-স্টেট কোয়াড্রেচার অ্যামপ্লিটিউড মড্যুলেশন সাধারণ ফরম্যাটের তুলনায় প্রতি প্রতীকে বেশি তথ্য সংরক্ষণ করে, ফলে ডেটা রেট বেড়ে যায়।

দলটি ১৯টি সমন্বিত রিসারকুলেটিং লুপ তৈরি করে, প্রতিটি লুপে ছিল ৫৩.৫ মাইল ফাইবার, স্প্লিটার, কম্বাইনার, অ্যাম্প্লিফায়ার এবং নিয়ন্ত্রণ সুইচ। সুইচের মাধ্যমে সিগন্যালকে ২১ বার লুপে ঘোরানো হয়, তারপর রিসিভারে পাঠানো হয়। এতে মোট দূরত্ব দাঁড়ায় ১,১২৩ মাইল। তারা C ও L ব্যান্ড জুড়ে ১৮০টি তরঙ্গদৈর্ঘ্য চালু করে, প্রতিটিতে 16QAM মড্যুলেশন প্রয়োগ করা হয়। শেষে, ১৯-চ্যানেল রিসিভার স্পেশাল চ্যানেলগুলো আলাদা করে, আর MIMO ইঞ্জিন কাপলড কোরের সিগন্যাল গুলিয়ে যাওয়া সমস্যা সমাধান করে। এই প্রদর্শনী দেখিয়েছে যে— স্ট্যান্ডার্ড মাপের ফাইবারে ঘন স্পেশাল চ্যানেল, বিস্তৃত তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ব্যবহার এবং যৌথ অ্যাম্প্লিফিকেশন একসঙ্গে ব্যবহার করলে ক্যাপাসিটি–ডিস্ট্যান্স প্রোডাক্ট উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো যায়।
জাপানের এই কাজের ফলে অনেকটা পিছনে পড়ে গিয়েছে আমেরিকা। তাদের থেকে অনেক দ্রুত জাপানের নেট পরিষেবা। ফলে আগামীদিনে এই ব্যবস্থা যদি বিশ্বের অন্য দেশগুলি চালু করে তাহলে সেখান থেকে তারা অনেকটা এগিয়ে যাবে। অন্যদিকে এতদিন যেখানে আমেরিকার দাপট ছিল সেখানে এবার জাপান নিজের রাজত্ব করবে।
