আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাজার, দোকানে গিয়েও প্লাস্টিকের ব্যাগ না পেলে গোসা হওয়া মানুষের সংখ্যাও কম নয়। এছাড়াও দৈনন্দিন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও প্লাস্টিককে সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা কার্যত অসম্ভব হয়ে গেছে। প্যাকেজড পানীয় জল থেকে চিপস, জামা কাপড় কেনা থেকে মাছ, সবজি - সবেতেই সশব্দে প্লাস্টিকের উপস্থিতি। আর এই প্লাস্টিকই ধীরে ধীরে থাবা বসাচ্ছে পরিবেশে, জীববৈচিত্র্যে, মানুষের জীবনে। আমাদের চরম নিঃস্পৃহতার কারণেই চারপাশ থেকে আমাদের ঘিরে ফেলছে প্লাস্টিক দৈত্য।


১৯৫০ সালে সারা বিশ্বে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদিত হত ২ মিলিয়ন টনের আশেপাশে। ২০১৫ সালে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪১৯ টনের বেশি। বর্তমানে তা ৪৬০ টনের কাছাকাছি। তথ্য বলছে এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সালে বিশ্বে প্লাস্টিক উৎপাদিত হবে ১৪৮০ মিলিয়ন টনের বেশি। সময়ের সঙ্গে প্লাস্টিকের উৎপাদন যেমন বেড়েছে তেমনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্লাস্টিক বর্জ্য। যা ক্রমেই জমছে আমাদের এই পৃথিবীতে, জমছে সমুদ্রের জলে, নদী নালায়। দফারফা হচ্ছে পরিবেশের।


সম্প্রতি এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, ২০২৪ সালে পৃথিবীজুড়ে মোট ২০০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয়েছে। অর্থাৎ বিশ্বের প্রতিটি মানুষ পৃথিবীর বুকে বছরে ২৮ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলেছেন। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৬৬ শতাংশ জনসংখ্যা এমন এলাকায় বসবাস করেন যেখানে স্থানীয় ব্যবস্থাপনার ক্ষমতার চেয়ে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ বেশি।


বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন আনুমানিক ২০০০ ট্রাক প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হচ্ছে পৃথিবীর প্রতিটি সমুদ্র, নদী, জলাশয়ে। UNEP-এর সমীক্ষা অনুসারে, প্লাস্টিক দূষণের সমস্যা খুবই গুরুতর আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তন, বাস্তুতন্ত্রের অবক্ষয় এবং সম্পদের ব্যবহার সহ অন্যান্য পরিবেশগত চাপের পাশাপাশি প্লাস্টিকের পরিবেশগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিগুলির দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।


বর্তমানে বিশ্বে প্রতিবছর সমুদ্রে জমা হচ্ছে ১৪ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক। এখনই যদি এই বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়ে সেক্ষেত্রে ২০৪০ সালে এই পরিমাণ দাঁড়াবে ২৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন। যদি এর সঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিককে যুক্ত করা হয় সেক্ষেত্রে ওই একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৬০০ মিলিয়ন টন। বিপুল পরিমাণ এই প্লাস্টিকের কারণে ক্ষতি হচ্ছে জীববৈচিত্র্যের। বিপদের মুখে পড়ছে বহু জলজ প্রাণী।


বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যত প্লাস্টিক উৎপাদিত হয় তার ৯০ শতাংশই পুনঃব্যবহারযোগ্য নয়। যদিও প্লাস্টিকের ব্যবহার ক্রমশই বাড়ছে। ফলে প্রতিদিনই বিরাট পরিমাণে বর্জ্য প্লাস্টিক জমছে পৃথিবীর বুকে এবং ক্রমশ ক্রমশ যা গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করছে।


এখনও পর্যন্ত সবথেকে বেশি প্লাস্টিকের ব্যবহার হচ্ছে প্যাকেজিং শিল্পে। পরিমাণের হিসেবে যা প্রায় ৪৪ শতাংশ। এরপরেই আছে নির্মাণ শিল্প, স্বয়ংচালিত শিল্প ইত্যাদিতে। সঠিক পরিকল্পনা করে ধাপে ধাপে এইসব ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে পারলে আগামী দিনে তা পরিবেশের পক্ষে লাভদায়ক হয়ে উঠবে।