আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কুররাম জেলায় আফগান তালিবান ও পাক বাহিনীর মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতের এই ঘটনায় সীমান্তে ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।

পাকিস্তানের সরকারি সংবাদমাধ্যমের দাবি, বিনা প্ররোচনায় প্রথম গুলি চালিয়েছে আফগান বাহিনী। জবাবে পাক সেনারাও পাল্টা গুলি চালায় এবং আফগানিস্তানের একাধিক ট্যাঙ্ক ও সেনা চৌকি গুঁড়িয়ে দেয়। দু'জন পাকিস্তানি নিরাপত্তা আধিকারিক সংবাদ সংস্থা এপি-কে এই ঘটনার কথা জানিয়েছেন। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমে বলা হয়েছে, "আফগান তালিবান এবং ফিতনা আল-খাওয়ারিজ বিনা প্ররোচনায় কুররামে গুলি চালিয়েছে। পাকিস্তানি সেনা পূর্ণ শক্তি দিয়ে তার জবাব দিয়েছে।"

ইসলামাবাদের অভিযোগ, আফগান বাহিনী বার বার তাদের সীমান্ত চৌকিতে হামলা চালাচ্ছে। অন্য দিকে, কাবুলের পাল্টা দাবি, পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা এবং সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করছে, তাই তারা জবাব দিতে বাধ্য হচ্ছে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কুররাম জেলায় আফগান সেনা এবং পাকিস্তানি তালিবান জঙ্গিরা যৌথ ভাবে একটি পাক সেনা চৌকিতে হামলা চালালে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এমনকি, পাকিস্তানি তালিবানদের একটি বড় প্রশিক্ষণ শিবিরও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলে আধিকারিকদের তরফে দাবি করা হয়েছে।

গুলির লড়াইয়ের পর তালিবান জঙ্গিরা নিজেদের ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যায় বলে খবর। তবে এই বিষয়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এখনও সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই আফগানিস্তানের তালিবান সরকার দাবি করেছিল, পাল্টা হানায় তারা ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে। যদিও পাকিস্তান এই সংখ্যা মানতে নারাজ। তাদের পাল্টা দাবি, সংঘর্ষে তাদের ২৩ জন সেনা নিহত হয়েছে এবং জবাবে তারা ২০০ জনেরও বেশি 'তালিবান ও সহযোগী সন্ত্রাসবাদী'-কে খতম করেছে।

বিগত কয়েক দিন ধরেই উত্তেজনা বাড়ছে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে। কাবুলের অভিযোগ, পাকিস্তান আফগানিস্তানের রাজধানী এবং দেশের পূর্বাঞ্চলের একটি বাজারে বিমান হানা চালিয়েছে। যদিও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ স্বীকার করেনি। অতীতে অবশ্য পাকিস্তান স্বীকার করেছে যে তারা তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপি-র গোপন ডেরায় সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালিয়েছে। টিটিপি আফগান তালিবানদের থেকে আলাদা একটি গোষ্ঠী হলেও তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখে। ইসলামাবাদের অভিযোগ, কাবুল এই জঙ্গি গোষ্ঠীকে আফগানিস্তানের মাটি থেকে অবাধে কার্যকলাপ চালানোর সুযোগ করে দিচ্ছে।

যদিও কাবুল এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, কোনও প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে আসল বিষয়টি আরও গভীর। আফগানিস্তান হাতছাড়া হওয়ার পরই পাকিস্তানে নিজেদের আধিপত্য মজবুত করতে চাইছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। এবং পাকিস্তানকে ব্যবহার করে তালিবান সরকারকে অতিষ্ঠ করার চেষ্টা করতে তারা। তালিবানও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয় তাই জন্য পাল্টা হামলা চালাচ্ছে আফগানিস্তানের সরকারও। ইতিমধ্যে কাবুলের সঙ্গে নয়া দিল্লির ঘনিষ্ঠতা আরও চিন্তায় ফেলেছে ইসলামাবাদকে। ফলে আরও জটিল হচ্ছে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক।