আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কৌশলগত নূর খান বিমানঘাঁটিতে জোরকদমে পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে। নতুন স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে, মে মাসে ভারতীয় বিমানবাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর আঘাতে ধ্বংস হওয়া স্থাপনা ও যানবাহনের জায়গায় নতুন দেয়াল ও কাঠামো তৈরি হচ্ছে। পাকিস্তান চেষ্টা করছে দ্রুত ক্ষয়ক্ষতির মেরামতি করে এই গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটির কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনতে।
১০ মে ভারতীয় বিমানবাহিনী ঘাঁটির ভেতরে একটি গুরুত্বপূর্ণ কমপ্লেক্সে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। সেখানে অবস্থান করছিল দুটি বিশেষ ট্রাক-ট্রেলার, যা সম্ভবত ড্রোন সম্পদের কমান্ড ও কন্ট্রোলের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল। এগুলি ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি পাশের ভবনগুলিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কোন অস্ত্র ব্যবহার করেছে তা প্রকাশ করেনি, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে সু-৩০ থেকে নিক্ষিপ্ত ব্রহ্মোস এবং রাফাল থেকে উৎক্ষেপিত স্কাল্প মিসাইল এই অভিযানে ব্যবহৃত হয়েছিল।
স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, ১০ মে আঘাতের দিন ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকা ১৭ মে-র মধ্যে পরিষ্কার করে ফেলা হয়। আর ৩ সেপ্টেম্বরের ছবিতে দেখা যায় নতুন দেয়াল ও কাঠামো, যা মূল নকশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলির অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা ও কাঠামো অচল হয়ে পড়ায় সেগুলি ভেঙে ফেলে পুরনো ভিত্তির ওপর নতুন স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। ফলে পাকিস্তান যেন বোঝাতে চাইছে, ভারতীয় আঘাত সাময়িক হলেও তাদের প্রতিরক্ষা পরিকাঠামোকে দীর্ঘমেয়াদে ভেঙে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
নূর খান বিমানঘাঁটি পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, যেখানে সা’ব এরাই-আই আকাশপথ নজরদারি ব্যবস্থা, সি-১৩০ পরিবহন বিমান এবং আইএল-৭৮ আকাশে জ্বালানি ভরার বিমান রাখা হয়। এগুলি পাকিস্তানের লজিস্টিকস, নজরদারি এবং সমন্বয়ের জন্য অপরিহার্য। তাই এখানে আঘাতকে কেবল কৌশলগত নয়, প্রতীকী বার্তাও হিসেবে দেখা হয়েছে। ভারত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরের কাছাকাছি ঘাঁটিতে আঘাত হেনে তাদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছে।
অপারেশন সিঁদুরের সূত্রপাত হয় ২২ এপ্রিল পাহালগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হওয়ার পর। কয়েক দিনের মধ্যেই ভারতীয় বাহিনী লক্ষ্য চূড়ান্ত করে এবং ৭ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত একাধিক আক্রমণ চালায়। সীমান্ত অতিক্রম করে প্রায় ২০০ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত প্রবেশ করে ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের রাডার, রানওয়ে, জঙ্গি শিবির ও হ্যাঙ্গারে আঘাত হানে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর এটি পাকিস্তানের ভেতরে ভারতের সবচেয়ে গভীর সামরিক অভিযান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ধারাবাহিক আঘাতের ফলে পাকিস্তান দ্রুত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হতে বাধ্য হয়।
নূর খান বিমানঘাঁটির পুনর্নির্মাণ পাকিস্তানের দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করলেও এটি একই সঙ্গে ভারতীয় আক্রমণের কার্যকারিতা এবং দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিবেশের নাজুক বাস্তবতাকেও স্পষ্ট করে তুলছে। দুই দেশের মধ্যে এই সংঘাত শুধু সামরিক শক্তির প্রদর্শনী নয়, বরং রাজনৈতিক বার্তাবাহক হিসেবেও কাজ করছে। একদিকে ভারত দেখাতে চাইছে যে তার প্রতিশোধ নেবার সক্ষমতা রয়েছে, অন্যদিকে পাকিস্তান বোঝাতে চাইছে যে তাদের প্রতিরক্ষা পরিকাঠামো টিকিয়ে রাখা এবং পুনর্নির্মাণ করার শক্তিও রয়েছে। এই দ্বন্দ্ব ভবিষ্যতে উপমহাদেশে নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত বহন করছে।
