রসুন শুধু স্বাদের জন্যই নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এটি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজম শক্তি উন্নত করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। নিয়মিত রসুন খেলে হৃদরোগ, ঠাণ্ডা, কাশি এবং শ্বাসকষ্টের ঝুঁকিও কমে। এছাড়াও রসুনে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান শরীরের কোষকে সুরক্ষিত রাখে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। খালি পেটে বা রান্নায় ব্যবহার করলে এর সুফল আরও বেশি পাওয়া যায়। প্রতিদিন একটি করে রসুন খেলে কী হয় জেনে নিন।

খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়া আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ২০২৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রসুনে আলিসিন নামক একটি যৌগ থাকে, যা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যযুক্ত। খাবারের সঙ্গে না খেলে শরীর আলিসিনকে আরও ভাল ভাবে শোষণ করতে পারে, ফলে আপনার ইমিউন সিস্টেম মৌসুমি জ্বর, সর্দি-কাশি এবং হালকা সংক্রমণের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা পায়।

২০১৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রসুন উচ্চ রক্তচাপ কমাতে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের প্রধান ঝুঁকি কমায়। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, রক্তনালীগুলো শিথিল রাখে এবং হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখে।

২০১৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দিন শুরু করার সময় খালি পেটে কাঁচা রসুন খেলে হজম ভাল হয়। রসুনে প্রোবায়োটিক ধরনের উপাদান থাকায় এটি ভাল ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি উদ্দীপিত করে, যা পেট ফুলে যাওয়া, হজমে সমস্যা এবং অনিয়মিত পাচনতন্ত্র থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।

কাঁচা রসুন লিভারের প্রাকৃতিক ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ ও ভারী ধাতু দূর করতে সাহায্য করে। এর ফলে শক্তি বৃদ্ধি পায়, অলসতা কমে এবং সার্বিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়।

রসুন যদিও জাদুর মতো ওজন কমায় না, ২০২২ সালের গবেষণায় দেখা গিয়েছে এটি খিদে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং মেটাবলিজম বাড়ায়। রসুন চর্বি পোড়ানোর প্রক্রিয়াকে সহায়তা করতে পারে এবং মিষ্টির প্রতি আসক্তি কমাতে সাহায্য করে।
দিল্লির পুষ্টিবিদ এবং ওজন কমানোর বিশেষজ্ঞ ডঃ সিমরান সাইনি বলেন, “রসুনের উচ্চ সালফার উপাদান এটিকে অ্যান্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য দেয়, যা হজম তন্ত্রকে পরিষ্কার রাখে। এটি সর্দি-কাশি প্রতিরোধ করে এবং হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। কাঁচা রসুন খেলে এর ঔষধি গুণ সর্বোচ্চভাবে পাওয়া যায়।”

রসুনের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি ভিতর থেকে পিম্পল ও ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। রক্ত সঞ্চালন ভাল হওয়ায় পুষ্টি উপাদান শরীরে আরও কার্যকরভাবে শোষিত হয়, যা ত্বকের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।

বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন এক থেকে দু’কোয়া রসুন খাওয়ার পরামর্শ দেন। বেশি খেলে পাকস্থলীতে জ্বালা বা অস্বস্তি সৃষ্টি হতে পারে। তাই রসুন ব্যবহার করলে পরিমিতি রাখা জরুরি।