আজকাল ওয়েবডেস্ক: অর্থনীতির কথা উঠলেই আমাদের মাথায় আসে জিডিপি, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্বের মতো কিছু গুরুগম্ভীর পরিসংখ্যান আর জটিল পরিভাষা। কিন্তু যদি বলা হয়, মেয়েদের স্কার্টের ঝুল, লিপস্টিকের বিক্রি অথবা পুরুষদের নতুন অন্তর্বাস কেনার হার দেখেও মন্দার পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব? বিশ্বাস না হলেও, অর্থনীতিবিদ এবং লগ্নিকারীরা দশকের পর দশক ধরে এমনই কিছু অদ্ভুত সঙ্কেত বিশ্লেষণ করে আসছেন এবং আশ্চর্যের বিষয় হল, বহু ক্ষেত্রে এই তত্ত্বগুলি নির্ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

 

এখানে তেমনই পাঁচটি বিচিত্র অর্থনৈতিক সূচকের কথা বলা হল, যা শুনতে অদ্ভুত লাগলেও সরকারি পরিসংখ্যান প্রকাশের আগেই অনেক সময় সত্যিটা তুলে ধরে।

স্কার্টের ঝুল

এই তত্ত্বটি সরাসরি ফ্যাশন দুনিয়া থেকে আমদানি করা। বলা হয়, অর্থনীতি যখন চাঙ্গা থাকে, তখন স্কার্টের ঝুল ছোট হতে শুরু করে, আর মন্দার সময়ে তা লম্বা হয়ে যায়। ষাটের দশকে যখন মার্কিন অর্থনীতিতে জোয়ার আসছে তখন মিনি স্কার্টের চল বেড়ে যায়, তেমনই মন্দার যুগে স্কার্টের ঝুল মাটি ছুঁয়েছিল। এর পিছনে কি কোনও বিজ্ঞান আছে? হয়তো নেই। কিন্তু অনেক সময়েই এই ধারণা আশ্চর্যজনক ভাবে মিলে যায়।

 

লিপস্টিক এফেক্ট

অনেকেই মনে করেন কঠিন সময়ে প্রসাধনীর বিক্রি প্রায়শই বেড়ে যায়, কারণ মানুষ সাধ্যের মধ্যে থাকা ছোটখাটো বিলাসিতার মাধ্যমে নিজেদের খুশি রাখতে চায়। ২০০৮ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে যখন ধস নেমেছিল, সেই সময়েও প্রসাধনী সামগ্রীর বিক্রি ৪.৪ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল।

 

পুরুষদের অন্তর্বাস

মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অ্যালান গ্রিনস্প্যান এই তত্ত্বের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। এর নেপথ্যের যুক্তিটি হল, অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময়ে পুরুষরা নতুন অন্তর্বাস কেনা কমিয়ে দেন। অর্থাৎ, পুরনোটিকেই যতটা সম্ভব বেশিদিন চালিয়ে নেন। ২০০৮ সালের মন্দার সময়, যখন পোশাকের সামগ্রিক বিক্রিতে তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি, তখন পুরুষদের অন্তর্বাস বিক্রি ২ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছিল।

 

আবর্জনা

আবর্জনা মিথ্যে বলে না। সাধারণ মানুষ কিংবা বহুজাতিক বিভিন্ন সংস্থা যখন কেনাকাটা কম করে, তখন আবর্জনাও কম তৈরি হয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলি জানিয়েছিল যে ২০০৮ সালের মন্দার সময় আবর্জনার পরিমাণ প্রায় ৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল। তাই আবর্জনার পাত্র খালি হতে শুরু করলে বুঝতে হবে, অর্থনীতির ভাঁড়ারও হয়তো খালি হচ্ছে।

 

স্যান্ডউইচ

পকেটে টান পড়লে দামি রেস্তরাঁর খাবার ছেড়ে মানুষ স্যান্ডউইচের মতো সস্তার খাবারের দিকে ঝোঁকে। ২০১০ সালের আর্থিক মন্দার সময় ব্রিটেনের বিখ্যাত সুপারমার্কেট ‘টেসকো’ লক্ষ করে যে তাদের স্যান্ডউইচের বিক্রি এক লাফে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।

 

এই অদ্ভুত সূচকগুলি হয়তো খুব তাড়াতাড়ি প্রথাগত অর্থনৈতিক চার্টের জায়গা নিতে পারবে না। কিন্তু এগুলি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে অর্থনীতি আসলে মানুষ, তাদের অভ্যাস, মানসিকতা এবং এমনকি দুপুরের খাবারের পছন্দের সঙ্গেও জুড়ে রয়েছে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব দৈনন্দিন জীবনের অতিতুচ্ছ জিনিসের উপরেও পড়ে। তাই এর পর যখন লম্বা স্কার্ট, বেশি লিপস্টিকের ব্যবহার বা স্যান্ডউইচের বিক্রি বাড়তে দেখবেন, বুঝবেন, অর্থনীতি হয়তো আগাম কোনও ইঙ্গিত দিতে চাইছে।