আজকাল ওয়েবডেস্ক: বলিউডে ফিটনেসের কথা উঠলেই তাঁর নাম প্রথম সারিতে আসে, প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছেও চাবুকের মতো সুঠাম শরীর তাঁর। তিনি অক্ষয় কুমার। দশকের পর দশক ধরে অ্যাকশন-নির্ভর ছবিতে অভিনয় করেও তিনি আজও ছিপছিপে, সতেজ সুঠাম। শত ব্যস্ততার মধ্যেও ৫৮ বছর বয়সে কীভাবে নিজেকে এমন ফিট রেখেছেন অভিনেতা? সম্প্রতি তিনি নিজেই ফাঁস করেছেন সেই রহস্য। আর অবাক করা বিষয় হল, জিলিপি, বরফির মতো মিষ্টি থেকে শুরু করে ছোলে-পুরির মতো খাবার- পছন্দের কিছুই বাদ দেন না তিনি।

অক্ষয়ের ফিটনেসের চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে একটিমাত্র নিয়মে, যা তিনি গত দু’দশক ধরে অক্ষরে অক্ষরে মেনে আসছেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অক্ষয় তাঁর খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কথা বলেন। সেখানে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি ছোলে-পুরি খাই। আমি সেই ধরনের মানুষ নই, যারা সব সময় ক্যালোরি বা প্রোটিনের হিসাব করে চলে। আমি সাধারণ জীবনযাপন করি।” তবে এর নেপথ্যে রয়েছে একটি শর্ত। গত ২০ বছর ধরে তিনি সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার পর কিচ্ছু খান না। তাঁর কথায়, “আমি সন্ধে সাড়ে ছ’টার পর আর কিছুই খাই না।”
পাশাপাশি, অক্ষয় মদও ছুঁয়ে দেখেন না। সামাজিক অনুষ্ঠানে তাঁকে পানীয় হাতে দেখা গেলেও, তিনি তা পান করেন না। তাঁর কাছে ফিটনেস মানে খাবার থেকে শরীরকে বঞ্চিত করা নয়, বরং ধারাবাহিকতা এবং অনুশাসন।

সন্ধে ৭টার আগে রাতের খাবার খাওয়ার উপকারিতা বহুবিধ। বিশেষজ্ঞদের মতে, অক্ষয়ের এই অভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এর একাধিক সুফল রয়েছে।
হজম শক্তি বাড়াতে: তাড়াতাড়ি খাবার খেলে ঘুমানোর আগে শরীর হজমের জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়, ফলে অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা পেট ফাঁপার মতো সমস্যা কমে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: রাতবিরেতে খাওয়ার প্রবণতা এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ এড়ানো যায়।
ঘুমের মান উন্নত হয়: তাড়াতাড়ি খেলে শরীরের স্বাভাবিক সার্কাডিয়ান রিদম (দৈনিক ছন্দ) বজায় থাকে, যা গভীর ঘুমে সাহায্য করে।
রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ: ইনসুলিনের মাত্রা স্থিতিশীল থাকে, ফলে ডায়াবিটিসের ঝুঁকি কমে।
আরও পড়ুন: পুরুষরা অন্তর্বাস কিনছেন? না একটিই দিনের পর দিন পরছেন? সেটাই বলে দিতে পারে অর্থনীতির অবস্থা! কীভাবে?
বিপাক হার বৃদ্ধি: সারারাত উপবাসে থাকলে শরীর নিজেকে মেরামত করার এবং ফ্যাট ঝরানোর সুযোগ পায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্দিষ্ট সময়ের পর না খাওয়ার এই অভ্যাস আসলে এক ধরনের ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’। দিল্লির ‘নিউট্রিশালা’-র প্রতিষ্ঠাতা, পুষ্টিবিদ রক্ষিতা মেহরা জানান, এই অভ্যাস ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়, ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরের প্রদাহ কমায়। পছন্দের খাবার খেয়েও অক্ষয়ের এই নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে চলা এবং মদ্যপান থেকে দূরে থাকা প্রমাণ করে যে, অনুশাসনই দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের চাবিকাঠি।
‘পাবমেড’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রেও ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের উপকারিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে ওজন নিয়ন্ত্রণ, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি, হৃদ্‌যন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং প্রদাহ কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতির প্রমাণ মিলেছে। তবে বিজ্ঞানীরা এও সতর্ক করছেন যে, সব অভ্যাস সকলের জন্য নয়। যে কোনও অভ্যাস নিজের জীবনে অনুশীলন করতে হলে আগে বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদ্যা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।