আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুখ যেমন মনের আয়না, তেমনই বসার ঘর বা ড্রইং রুমই বাড়ির সার্বিক অবস্থার পরিচায়ক। কেবল অতিথিদের অভ্যর্থনার জন্যই নয়, বরং পরিবারের সদস্যদের একসঙ্গে সময় কাটানো, বিশ্রাম নেওয়া এবং নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করার জন্যেও সুন্দরভাবে সাজানো একটি বসার ঘর দরকার। বসার ঘর সুন্দর করে সাজানো হলে বাড়ির অন্যান্য অংশেও একটি ইতিবাচক আবহ তৈরি হয়। পাশাপাশি, রুচিশীল সজ্জা ব্যক্তিত্ব এবং জীবনযাত্রার প্রতিফলন ঘটায়। তাই, বসার ঘর সাজানো কেবল সৌন্দর্যের বিষয় নয়, এটি জীবনযাত্রার মান এবং মানসিক শান্তির সঙ্গেও জড়িত।


কীভাবে সাজাবেন বসার ঘর?

১.  আলোর সঠিক ব্যবহার
প্রাকৃতিক আলো: দিনের বেলায় ভারী পর্দা সরিয়ে হালকা ও স্বচ্ছ পর্দা ব্যবহার করুন যাতে ঘরে প্রচুর আলো আসতে পারে। জানালার কাছে হালকা ও আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা রাখতে পারেন, যেখানে বসে বই পড়া বা হালকা কাজ করা যায়।
কৃত্রিম আলো: ঘরের মাঝেই রাখতে পারেন একটি সুন্দর ঝাড়বাতি বা আধুনিক সিলিং লাইট। পাশাপাশি, সোফার পাশে বা ঘরের কোণে একটি লম্বা ফ্লোর ল্যাম্প রাখুন। এটি একদিকে যেমন ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, তেমনি রাতে হালকা আলোয় ঘরকে একটি মোহময় রূপ দেবে। দেওয়ালের ক্ষেত্রে ওয়াল স্কন্স বা দেওয়ালের পাশে লাগানোর ছোট ল্যাম্প ব্যবহার করে বিশেষ কোনো ছবি বা শিল্পকর্মের উপর আলো ফেলতে পারেন।

২.  গাছ ব্যবহার
ছোট গাছ: স্নেক প্ল্যান্ট, মানি প্ল্যান্ট, পিস লিলি বা ছোট পাতাবাহার গাছ টবে করে জানালার ধারে, সেন্টার টেবিলে বা শেলফের উপর রাখতে পারেন।
মাঝারি আকারের গাছ: এরিকা পাম বা ফিকাস জাতীয় গাছ বড় টবে করে ঘরের কোণে রাখলে একটি স্নিগ্ধ ও সতেজ ভাব আসে।
ঝুলন্ত গাছ: বারান্দার কাছাকাছি বা জানালার পাশে ঝুলন্ত টবে লতানো গাছ লাগাতে পারেন। যদি প্রাকৃতিক গাছের পরিচর্যা করার সময় না থাকে, তবে ভাল মানের কৃত্রিম গাছ ব্যবহার করতে পারেন।

৩.  আসবাবের পুনর্বিন্যাস
আলোচনার কেন্দ্র তৈরি: বসার ঘরের আসবাব এমনভাবে সাজান যাতে একটি কেন্দ্র বিন্দু তৈরি হয়। যেমন, সোফা এবং চেয়ারগুলি একে অপরের দিকে মুখ করে রাখুন।
ফোকাল পয়েন্ট: ঘরের একটি নির্দিষ্ট স্থানকে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে নির্বাচন করুন। অর্থাৎ ঘরে ঢুকলে সেখানেই যাতে প্রথম চোখ যায়। একটি সুন্দর ছবি, আকর্ষণীয় শেলফ বা একটি বড় টিভি লাগাতে পারেন। তার পর সেই অনুযায়ী অন্যান্য আসবাব সাজান। তবে যাই করবেন, ঘরের আকারের কথা মাথায় রেখে করবেন। ছোট ঘরে বেশি আসবাব না রেখে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা রাখুন যাতে হাঁটাচলা করতে সুবিধা হয়।
কার্পেট ব্যবহার: বসার এলাকার নিচে একটি সুন্দর কার্পেট বিছিয়ে দিন।

৪.  রঙিন কুশন
রঙের সমন্বয়: সোফার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে বা বিপরীত রঙের কুশন ব্যবহার করুন। বিভিন্ন আকারের এবং টেক্সচারের কুশন ব্যবহার করলে বৈচিত্র্য আসবে।
প্যাটার্ন: স্ট্রাইপ, ফ্লোরাল বা জ্যামিতিক প্যাটার্নের কুশন ব্যবহার করে ঘরের একঘেয়েমি দূর করতে পারেন।
থ্রোর ব্যবহার: সোফার একপাশে বা চেয়ারের হাতলে একটি নরম থ্রো (পাতলা চাদর) রাখুন। এটি শুধু আরামদায়কই নয়, ঘরের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে। শীতকালে এটি ব্যবহার করা আরও উপযোগী।
ঋতু অনুযায়ী পরিবর্তন: ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কুশন ও থ্রোর রঙ এবং উপাদান পরিবর্তন করতে পারেন। যেমন, গরমকালে হালকা রঙের সুতির কুশন এবং শীতকালে গাঢ় রঙের উলের থ্রো ব্যবহার করতে পারেন।

৫.  ব্যক্তিগত স্পর্শ
ফ্যামিলি ফটো গ্যালারি: দেওয়ালের একটি অংশে বিভিন্ন আকারের ফ্রেমে বাঁধানো পারিবারিক ছবি দিয়ে একটি গ্যালারি তৈরি করুন।
শিল্পকর্ম: আপনার পছন্দের শিল্পকর্ম, যেমন - পেন্টিং, ফটোগ্রাফ বা ছোট ভাস্কর্য বসার ঘরে রাখুন।
বই ও ম্যাগাজিন: একটি সুন্দর বুকশেলফ বা ম্যাগাজিন র‍্যাকে আপনার পছন্দের বই ও ম্যাগাজিন গুছিয়ে রাখুন। এটি আপনার রুচির পরিচয় দেবে।
স্মারক: বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা স্যুভেনিয়ার বা বিশেষ স্মৃতিচিহ্ন একটি ছোট টেবিলে বা শেলফে সাজিয়ে রাখুন।
মোমবাতি ও সুগন্ধী: সুন্দর মোমবাতি এবং সুগন্ধী ডিফিউজার ব্যবহার করে ঘরে একটি স্নিগ্ধ পরিবেশ তৈরি করতে পারেন।