অনেকেই সকালে উঠে জলখাবার খান না। সোজা দুপুরে থালা সাজিয়ে বসেন। আবার কেউ কেউ রাত হলেই ফ্রিজ খুলে চকোলেট-আইসক্রিমের পসার সাজান। আপাত দৃষ্টিতে যা নিছকই অভ্যাস, নিঃশব্দে তা শরীরেরও ক্ষতি করতে পারে। আমাদের পাকস্থলী প্রত্যেক মুহূর্তে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। আমরা যা খাই, পান করি, এমনকি যা অনুভব করি, সব কিছুকেই প্রক্রিয়াজাত করে। তবুও প্রতিদিনের কিছু সূক্ষ্ম অভ্যাস, যেগুলি আমরা প্রায়শই উপেক্ষা করি, নিঃশব্দে এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। খাবার এড়িয়ে যাওয়া, তাড়াহুড়ো করে খাওয়া, অতিরিক্ত ক্যাফেইনের উপর নির্ভর করা বা গভীর রাতে খাবার খাওয়ার অভ্যাস প্রথমে নিরীহ মনে হলেও, সময়ের সঙ্গে এগুলো ফুলে যাওয়া, অ্যাসিডিটি, এমনকি আরও গুরুতর হজমজনিত সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে।

হায়দরাবাদের কেয়ার হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর ডা. আকাশ চৌধুরী বলছেন, “আমরা প্রায়ই দেখি, কীভাবে প্রতিদিনের কিছু অভ্যাস অজান্তেই পাকস্থলীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে”। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ব্যথানাশক বা অন্য ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এর অন্যতম বড় কারণ। তিনি সতর্ক করে বলেন, “নিয়মিত সেবনে এসব ওষুধ পাকস্থলীর আস্তরণ ক্ষয় করতে পারে এবং আলসার বা এমনকি রক্তক্ষরণেরও কারণ হতে পারে।” ধূমপান এবং মদ্যপান সেই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। পাকস্থলীকে উত্তেজিত করে এবং তার স্বাভাবিক পুনর্গঠনের ক্ষমতাকে মন্থর করে দেয়।

হায়দরাবাদের অ্যারেটে হাসপাতালের মেডিকেল গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির প্রধান ডা. পবন রেড্ডি থোন্ডাপু এক সাধারণ অভ্যাসের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তা হল জলখাবার এড়িয়ে যাওয়া। তিনি ব্যাখ্যা করেন, “ঘুম থেকে ওঠার পর দীর্ঘ সময় পাকস্থলী খালি থাকলে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়, যা সময়ের সঙ্গে গ্যাস্ট্রাইটিস, পেট ফোলা, এমনকি আলসারের কারণও হতে পারে।” রাতে অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাসকেও তিনি ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত করেন। তাঁর কথায়, “শোওয়ার ঠিক আগে ভারী, তেল-ঝালযুক্ত খাবার খেলে তা দীর্ঘ সময় পাকস্থলীতে রয়ে যায়, যার ফলে অ্যাসিড রিফ্লাক্স, বুক জ্বালা এবং ঘুম ভাল না হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।”

দুই চিকিৎসকই সহজ অভ্যাসের মাধ্যমে প্রতিরোধক গড়ে তোলার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। ডা. থোন্ডাপুর পরামর্শ, “পাকস্থলীকে নিয়মিত, হালকা এবং সুষম খাবার দিন। জলখাবার এড়ানো যাবে না, রাতের খাবার ঘুমনোর অন্তত দু’তিন ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত এবং পর্যাপ্ত জল খাওয়াও জরুরি।” ডা. চৌধুরীর সংযোজন, “সবচেয়ে বড় কথা, বারবার পেটের সমস্যা হলে হালকাভাবে নেবেন না। সময় মতো চিকিৎসা করালে ছোটখাটো জ্বালা-পোড়া বড় অসুখে রূপ নেবে না।”

সচেতনভাবে খাবার খাওয়া, ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল সেবন সীমিত করা, ওষুধ সঠিকভাবে ব্যবহার করা এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পাকস্থলীকে সুস্থ এবং শক্তিশালী রাখা সম্ভব।