আজকাল ওয়েব ডেস্ক: সিবলিং রাইভ্যালরি বা ভাই বোনের ইর্ষা আমাদের পরিবারে বা সমাজে কোনো নতুন ঘটনা নয়।যুগ যুগ ধরে তা চলে আসছে।কিন্তু তখন সমাজে যৌথপরিবারের চল ছিল, তাই মানসিক দ্বন্দ্ব বা ইর্ষা আরো অন্য পরিবারের সদস্যদের মধ্যে চ্যানেলাইজ করে একটা সমাধানের পথ বেরিয়ে আসতো।কিন্তু এখন নিউক্লিয়ার পরিবারে খুদে সদস্যদের মা বাবা ছাড়া কাছে টানার মতন কেউ থাকেনা বাড়ীতে।তাই তারা এক অসম্ভব ইনসিকিউরিটিতে ভুগতে থাকে নতুন কোনো সদস্যের আগমনবার্তা পেলেই।
প্রথম সন্তান একশ শতাংশ ভালবাসা ও অ্যাটেনশন পায় যখন সে একা থাকে। তার সমস্ত চাহিদা, গল্প খেলাধূলোর সঙ্গী তার মা বা বাবা। তাই হঠাৎই যখন নতুন সদস্যের আসার খবর সে পায় স্বাভাবিকভাবেই সে ভয় পেয়ে যায় তার ভালবাসা বা অ্যাটেনশন শেয়ার করে নেবার জন্য।
স্বাভাবিক ভাবেই ছোট সন্তানটির ওপর সবারই অ্যাটেনশন একটু বেশীই থাকে।তখন থেকেই সূত্রপাত হয় সিবলিং রাইভ্যলরির। ক্রমে বড় বাচ্চাটির মনে হতে থাকে সে বন্চিত হয়ে যাচ্ছে সব কিছু থেকে। তারই আক্রোশ এসে পড়ে ছোট বাচ্চাটির ওপর। অনেক ক্ষেত্রে আবার উল্টো ব্যাপারও হয়। ছোট বাচ্চাটি খুব একটা গুরুত্ব না পেলে তার মনে হয় বড় দাদা বা দিদিকেই মা বাবা বোধহয় বেশী ভালবাসে। ফলে শুরু হয়ে যায় সিবলিং রাইভ্যালরি।
সবসময় চেষ্টা করা উচিত দুটি শিশুর মধ্যে যেন তিন থেকে চার বছরের পার্থক্য থাকে। তার বেশীও নয় তার কমও নয়। প্রথম বাচ্চাটি স্বাধীনভাবে কিছু কাজ নিজে করতে শিখে গেলেই দ্বিতীয় বাচ্চার কথা ভাবা উচিত। তা না হলে মা বাবার পরিশ্রম অত্যধিক বেড়ে যায় ও কোনোভাবেই পেরেন্টিং ব্যাপারটা তারা উপভোগ করতে পারেন না।তাদের সেই ক্লান্তি বা হতাশা গিয়ে পড়ে দুটি বাচ্চার ওপর।
বাচ্চাকে আগে থাকতে গল্পচ্ছলে জানান বাড়ীর নতুন অতিথির কথা। তার সাথে এটাও জানান সবাই মিলে তার দেখাশোনা করব। সেক্ষেত্রে আপনার বড় বাচ্চাটিকে আগে থেকেই দায়িত্ব দিয়ে রাখুন।মনে রাখবেন, বাড়ীতে সবচেয়ে অবুঝ মন ওর আর সবচেয়ে বেশী ইনসিকিওরিটিতে আছে।
দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় রাখুন বড় বাচ্চাটির জন্য।ওর সাথে গল্প করুন, ছবি আঁকুন, ওর স্কুলের গল্প শুনতে চান। প্রতিদিন যদি নিয়ম করে ওর সাথে সময় কাটান তবে মনের মধ্যে রাগ অভিমান জন্মাবার সম্ভাবনাও কমে যাবে।বিভিন্ন ধরনের অ্যাক্টিভিটির মধ্যে রাখুন।ওর নিজের একটা জগৎ, বন্ধুবান্ধব সবার মধ্যে থাকলে ওর মধ্যেও আত্মবিশ্বাস তৈরী হবে।
দুই বাচ্চার মধ্যে কোনো তুলনামূলক আলোচনা বা কম্পেয়ার না করাই ভালো। প্রতিটি বাচ্চাই ইউনিক। তাই তাদের দুর্বল জায়গাগুলো কে আলাদাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করুন এবং উৎসাহ দিন।
ওদের সব সমস্যার নিজেরা সমাধান করতে যাবেন না। বরং ওদের ওপর দায়িত্ব দিন নিজেদের সমস্যা মেটানোর জন্য। এর জন্য ওদের মধ্যে রিওয়ার্ড সিস্টেম চালু করতে পারেন। দেখবেন ওরা অনেক সহজভাবে নিজেদের সমস্যা মিটিয়ে ফেলছে।
Pজেন্ডার প্রায়োরিটি যাতে না হয় সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখুন।ফলে বাচ্চাদের মনে কোথাও যেন একটা তীব্র কষ্ট দানা বাঁধে, যা ধীরে ধীরে সিবলিং রাইভ্যলরির রূপ নেয়।
বাচ্চারা কোনো সমস্যা নিয়ে এলে মন দিয়ে তা শুনুন। অনেকসময় ধৈর্যের অভাবে আমরা পুরো ব্যাপারটা না শুনেই যে একটু দুষ্টু তাকে বকুনি দিই।
এটা একদম করবেন না। বরং আলাদাভাবে সমস্যাটা শুনে তার সমাধান করার চেষ্টা করুন।যাদের জমজ বাচ্চা তারা চেষ্টা করুন দুটি বাচ্চার দুধরনের অ্যাক্টিভিটি প্ল্যান করতে।
