আজকাল ওয়েবডেস্ক: “না, না, আমি তো এমন কথা বলিনি, তোমার মনে নেই।” “এই সামান্য বিষয় নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করার কী আছে? তুমি বড্ড বেশি ভাবো।” “তোমার ভালর জন্যই তো বলছি, অথচ তুমিই আমাকে ভুল বুঝছ!” - একবার দু’বার নয়, আপনার সঙ্গী কি প্রতিনিয়তই এই ধরনের কথা বলেন? সাবধান! ‘গ্যাসলাইটিং’-এর মতো এক ভয়ঙ্কর মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন না তো?

 

‘গ্যাসলাইটিং’ শব্দটি এখন মনোবিজ্ঞানের জগতে বহুল প্রচলিত হলেও এর উৎস লুকিয়ে আছে ১৯৩৮ সালের একটি নাটক এবং তার উপর ভিত্তি করে নির্মিত ১৯৪৪ সালের বিখ্যাত সিনেমা ‘গ্যাসলাইট’-এর মধ্যে। সিনেমার গল্পে এক স্বামী চক্রান্ত করে বাড়ির গ্যাসলাইট কখনও বাড়িয়ে বা কমিয়ে দিত এবং স্ত্রী যখন সেই বিষয়ে কিছু বলত, তখন সে এমন ভান করত যেন কিছুই হয়নি। ধীরে ধীরে স্ত্রীর মনে বিশ্বাস জন্মায় যে তার মানসিক স্থিতি ঠিক নেই এবং সে পাগল হয়ে যাচ্ছে। এই গল্পের মতোই, বাস্তবেও যখন কোনও সম্পর্কের মধ্যে একজন সঙ্গী পরিকল্পিতভাবে নানা কথার মারপ্যাঁচে অপরজনের মনে আত্মবিশ্বাসের অভাব, বিভ্রান্তি এবং আত্মসন্দেহ তৈরি করেন, তখন সেই প্রক্রিয়াকেই মনোবিদরা ‘গ্যাসলাইটিং’ বলেন।

এটি এক ধরনের মানসিক নির্যাতন, যা শারীরিক আঘাতের চেয়েও ভয়ঙ্কর। কারণ এর ক্ষত বাইরে থেকে দেখা যায় না, বরং তা ধীরে ধীরে ভেতর থেকে একজনকে শেষ করে দেয়। গ্যাসলাইটিংয়ের মূল উদ্দেশ্যই হল সঙ্গীর মনের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করা এবং তাকে মানসিকভাবে পঙ্গু করে তোলা।

 

কীভাবে বুঝবেন আপনি গ্যাসলাইটিংয়ের শিকার?

বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাসলাইটাররা নিজেদের কার্যসিদ্ধির জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট কৌশল ব্যবহার করেন। এই লক্ষণগুলো চিনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

 

ঘটনাকে অস্বীকার করা: গ্যাসলাইটাররা নিজেদের বলা কথা বা করা কাজকে সরাসরি অস্বীকার করেন। তারা এমনভাবে কথা বলেন যেন সেই ঘটনাটি কখনও ঘটেইনি। ফলে আপনার নিজের স্মৃতির উপর সন্দেহ হতে শুরু করবে।

 

আপনার অনুভূতিকে গুরুত্ব না দেওয়া: আপনার দুঃখ, কষ্ট বা রাগকে তারা ‘অহেতুক’ বা ‘বাড়াবাড়ি’ বলে উড়িয়ে দেবেন। এর ফলে আপনার মনে হতে পারে, আপনার অনুভূতিগুলির কোনও মূল্য নেই।

 

দোষারোপ করা: সমস্ত ভুলের দায় তিনি কৌশলে আপনার উপর চাপিয়ে দেবেন। দীর্ঘদিন চলতে থাকলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে যে আপনার মনে হবে, যা কিছু খারাপ হচ্ছে, তার জন্য আপনিই দায়ী।

 

আপনাকে একঘরে করে দেওয়া: আপনার বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা কথা বলে আপনাকে তাঁদের থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। উদ্দেশ্য হল, আপনি যেন কারও থেকে সাহায্য নিতে না পারেন বা ভিন্ন দৃষ্টিকোণ না পান।

আপনার মানসিক স্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা: ক্রমাগত আপনাকে ‘পাগল’, ‘অস্থির’ বা ‘ভুলোমনা’ বলে আপনার আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানবেন। ধীরে ধীরে আপনিও নিজের মানসিক সক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়বেন।

 

মুক্তির উপায় কী?

গ্যাসলাইটিংয়ের শিকার হলে প্রথমেই বুঝতে হবে যে সমস্যাটা আপনার নয়, বরং যিনি গ্যাসলাইট করছেন, তাঁর। নিজের অনুভূতি ও চিন্তাভাবনার উপর বিশ্বাস রাখুন। নির্ভরযোগ্য বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ মনোবিদের সাহায্য নিন। মনে রাখবেন, সুস্থ সম্পর্কের ভিত্তি হল বিশ্বাস, সম্মান এবং সততা। নিয়ন্ত্রণ বা মানসিক নির্যাতন নয়। এই চোরাবালি থেকে বেরিয়ে আসা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।