আজকাল ওয়েবডেস্ক: জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে ভারতকে তীব্র সমালোচনা করলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস। তিনি অভিযোগ করেন, ভারত বহিষ্কৃত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সংকট উসকে দিচ্ছে এবং ঢাকার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।
প্রাক্তন দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমানে এশিয়া সোসাইটির প্রেসিডেন্ট কিয়ং-হোয়া কাং–এর সঞ্চালিত আলোচনায় ইউনুস বলেন, “আমাদের এখন ভারতের সঙ্গে সমস্যা হচ্ছে কারণ তারা পছন্দ করেনি শিক্ষার্থীরা যা করেছে। অথচ তারা সেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আতিথ্য দিচ্ছে, যিনি এই সমস্যার জন্ম দিয়েছেন এবং তরুণদের হত্যা করেছেন। এতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মধ্যে বড় ধরনের টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের আন্দোলনকে ইসলামপন্থী উগ্রবাদ বা তালিবানি রূপে দেখানোর জন্য “ভুয়ো খবর ও অপপ্রচার” চালানো হচ্ছে। ইউনুসের কথায়, “ওরা বলছে এটা তালিবান আন্দোলন। এমনকি আমাকেও তালিবান আখ্যা দিচ্ছে।”
আলোচনায় ইউনুস বিশেষভাবে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “সার্ক এক ধরনের পারিবারিক সম্পর্কের সংগঠন। এই ধারণার জন্মই হয়েছে বাংলাদেশে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতোই আমরা তরুণ প্রজন্মকে ঘনিষ্ঠ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের এক প্রতিবেশী দেশ সেই কাঠামো পছন্দ করেনি। ফলে সংগঠনটি প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে।”
আরও পড়ুন: গাজা গণহত্যা: মৃতের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে বিস্ফোরক দাবি দুই গবেষকের!
ইউনুসের মতে, সার্কের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়লে শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ সম্ভব হতো। “আমরা চেয়েছিলাম দক্ষিণ এশিয়ার তরুণরা একে অপরের সঙ্গে মিশুক, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করুক, ব্যবসা করুক। ইতিহাস আমাদের সেই সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু এক দেশের রাজনীতি পুরো প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দিল,” তিনি বলেন।
ভারতের পক্ষ থেকে যদিও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি, তবে প্রাক্তন পররাষ্ট্রসচিব কানওয়াল সিবাল এক্স–এ ইউনুসের বক্তব্যকে তীব্রভাবে খণ্ডন করেছেন। তিনি লিখেছেন, “সার্কের অচলাবস্থার জন্য পাকিস্তানের কাশ্মীর-আসক্তি, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য অস্বীকার, ট্রানজিট না দেওয়া এবং সন্ত্রাসবাদ পৃষ্ঠপোষকতাই মূল কারণ। বাংলাদেশও একসময় ভারতবিরোধী গোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছিল এবং উত্তরপূর্ব ভারতের ট্রানজিট আটকে রেখেছিল।”
সিবাল প্রশ্ন তোলেন, “ইউনুস ফ্রি মুভমেন্টের কথা বলছেন, কিন্তু পাকিস্তান থেকে আসা জঙ্গি অনুপ্রবেশ ও বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোর ব্যর্থতার কী হবে? তিনি সাক্ষাৎকারে সুন্দরভাবে কথাবার্তা বলছেন, কিন্তু সত্য লুকোচ্ছেন।” তিনি আরও যোগ করেন, “আঞ্চলিক সহযোগিতা বন্ধ হয়নি, বরং বিকল্প কাঠামো গড়ে উঠেছে। বিবিআইএন (ভুটান, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল) কাঠামোই তার প্রমাণ। শেখ হাসিনার আমলেই এসব ট্রানজিট সুবিধা কার্যকর হয়েছিল।”
উল্লেখ্য, গত আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের জোয়ারে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্বে আছেন নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুস। তবে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক যে ক্রমেই জটিল আকার নিচ্ছে, তার সর্বশেষ ইঙ্গিত মিলল নিউ ইয়র্কে তাঁর এই বক্তব্যে। বাংলাদেশে চলমান অস্থিরতা ও আঞ্চলিক কূটনীতিতে এর প্রভাব নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এখন নতুন এক টানাপোড়েনের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
