ইলিশ ভালবাসেন না, এমন বাঙালি বোধহয় প্রদীপ নিয়ে খুঁজলেও মেলা ভার। সর্ষে দিয়ে ভাপা হোক বা বেগুন-কালো জিরে দিয়ে পাতলা ঝোল, রুপোলি শস্য পাতে থাকলে নিমেষেই উঠে যায় এক থালা ভাত। তাই পকেট পুড়লেও এই মাছ কিনতে কার্পণ্য করেননা মৎস্যপ্রেমীরা। কিন্তু জানেন ইলিশ খেলে কী কী উপকার মেলে? কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি? জেনে নিন।

ইলিশ মাছ একটি চর্বি এবং তেলযুক্ত মাছ। দৈনন্দিন জীবন হোক বা অনুষ্ঠান, সব ক্ষেত্রেই এই মাছের জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। ইলিশ মাছের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। তবে কিছু মানুষের এই মাছ এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এটি রক্তে কোলেস্টেরল এবং সুগার বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। ইলিশ মাছের কিছু উপকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি দেখে নেওয়া যাক।

১০০ গ্রামের ইলিশ মাছ প্রায় ২১.৮ গ্রাম প্রোটিন ধারণ করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। ইলিশে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং আয়রনের মতো পুষ্টিকর উপাদান। ইলিশ মাছের স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণও বেশি, যা রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করতে সহায়ক।

ইলিশ মাছ জয়েন্টের ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে এবং চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে, যা রাতকানা রোগ দূর করতে সহায়ক। ইলিশের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পুষ্টিবিদরা দাবি করেন, হাঁপানি আক্রান্ত শিশুদের জন্য ইলিশ মাছ উপকারী হতে পারে। এটি শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে। ইলিশ মাছ অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে খনিজ লবণ রয়েছে। ইলিশ ভিটামিন এ-রও একটি উৎকৃষ্ট উৎস। এটি খেলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি মেলে। এটি ফুসফুসের স্বাস্থ্যও বজায় রাখে। ইলিশের পুষ্টিগুণ মানসিক ক্লান্তি কমাতেও সহায়ক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের অ্যালার্জি বা গ্যাসের সমস্যা রয়েছে, তাদের ইলিশ মাছ খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। অ্যালার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা নেটওয়ার্ক ইন্ডিয়া (AANI)-এর তথ্য অনুযায়ী, অনেক মানুষের ক্ষেত্রে ইলিশ খাওয়ার পর শ্বাসকষ্ট, ফুসকুড়ি, নাক দিয়ে জল পড়া, বারবার হাঁচি, পেটে ব্যথা, ত্বকের জ্বালা বা ফোড়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ইলিশ মাছের মধ্যে অন্যান্য মাছের তুলনায় কোলেস্টেরলের পরিমাণ কিছুটা বেশি থাকে। তাই যেসব রোগীর রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, তাদের ইলিশ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এমন রোগীরা মাসে সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম ইলিশ খেতে পারেন।
পুষ্টিবিদদের মতে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও ইলিশ একেবারে নিরাপদ নয়। ইলিশ খেলে অনেক সময় রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যাদের HBA1c লেভেল ৬.৫-এর বেশি, তাদের ইলিশ মাছ সম্পূর্ণ এড়ানো জরুরি। অন্যদিকে, যাদের HBA1c লেভেল ৬.৫ বা তার নিচে, তারা মাসে সর্বোচ্চ ২০০ গ্রাম ইলিশ খেতে পারেন।

অর্থাৎ ইলিশ যতই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হোক না কেন, ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরলের রোগীদের জন্য পরিমিতি মেনে খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। অতিরিক্ত খাওয়া শরীরের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ইলিশের স্বাদ উপভোগ করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।