আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিজেপি শাসিত দিল্লি এবং হরিয়ানায় পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে বাঙালি হওয়ার 'অপরাধে' সেখানকার ডবল ইঞ্জিনের সরকার তাড়িয়ে দিয়েছিল মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরের সন্তোষ দাস এবং তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে। কর্মহীন হয়ে মুর্শিদাবাদ জেলায় ফিরে এসে বিকল্প রোজগারের সন্ধানে পরিশ্রম এবং কাজ হারানোর শোক, সব কিছুর চিন্তায় মৃত্যু হল সন্তোষ দাস (৫৫) নামে এক ব্যক্তির। 

সন্তোষ দাসের মৃত্যুতে তাঁর পরিবার এবং রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস কাঠগড়ায় তুলেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে। 

 

সূত্রের খবর, বহরমপুর পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শিবনগর রোডের বাসিন্দা সন্তোষ দাস নিজের স্ত্রী পাতা দাস এবং ছেলে মিঠুন দাসকে নিয়ে বছরখানেক আগে রাজধানী দিল্লির যমুনা বিহার এলাকায় চলে যান। সেখানে দাস পরিবার পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যবসা শুরুর চেষ্টা করছিল।

 

অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের দিল্লিতে বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। যার জেরে সন্তোষ দাসের পরিবারের ওপরও খাঁড়া নেমে আসে। পাতা দাস বলেন,' আমরা দিল্লির যমুনা বিহার এলাকায় থেকে কাজ করতাম। হঠাৎ করেই সেখানকার বিজেপির কিছু লোকজন আমাদের বলতে থাকে আমরা বাংলায় কথা বলি বলে আমরা বাংলাদেশি। সেই কারণে তারা আমাদেরকে দিল্লি থেকে চলে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে।' মৃতের স্ত্রী অভিযোগ করেন,' সেই সময় বাংলা ভাষাভাষী মানুষের উপর বিভিন্ন জায়গায় হামলা হচ্ছিল। তাই আমরা ভয় পেয়ে দিল্লি থেকে বিজেপি শাসিত হরিয়ানায় চলে যাই। সেখানে গিয়ে কাজ শুরু করার পরই বাংলায় কথা বলার জন্য আমাদের বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়। আমরা স্থানীয় বিজেপি নেতাদের ভোটার কার্ড ,আধার কার্ড-সহ ভারতীয় হওয়ার যাবতীয় প্রমাণপত্র দেখিয়েছিলাম। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদেরকে হরিয়ানা ছাড়তে বাধ্য করা হয়।'

 

দাস পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, এতদিন আমরা শুনেছিলাম বাংলায় কথা বলার জন্য মূলত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বিজেপি শাসিত রাজ্যে আক্রান্ত হচ্ছিলেন। কিন্তু আমরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ নই। তা সত্ত্বেও যেভাবে আমাদের বিজেপি শাসিত রাজ্য থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তার নিন্দার ভাষা নেই। 

আরও পড়ুন: এযুগের কুম্ভকর্ণ! বছরে ৩০০ দিন ঘুমিয়ে কাটান রাজস্থানের ব্যক্তি, কারণ খতিয়ে দেখতেই হাঁ চিকিৎসকেরা

ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জমানো টাকা থেকে তাঁরা বিজেপি শাসিত রাজ্যে বড়ি এবং বেসন তৈরি করার ছোটখাটো একটি ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এই ব্যবসায় তাঁরা কয়েক লক্ষ টাকা বিনিয়োগও করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশি সন্দেহে অত্যাচারের শিকার হওয়ার পর তাঁদের সেই বিনিয়োগের টাকা ফেলে মুর্শিদাবাদ জেলায় ফিরে চলে আসতে হয়েছে। পাতা দাস বলেন,' কাজ চলে যাওয়ার পর থেকেই আমার স্বামী সন্তোষ দাস প্রচন্ড চিন্তার মধ্যে থাকতেন। অতিরিক্ত চিন্তার কারণে তার 'ব্রেন স্ট্রোক' হয়। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে চিকিৎসার চলাকালীন তাঁর মৃত্যু হয়েছে।'

 

মঙ্গলবার সন্তোষ দাসের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সর্বতোভাবে তাঁদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন মুর্শিদাবাদ জেলার তৃণমূল নেতারা। আজ বহরমপুর পুরসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখার্জির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। নাড়ুগোপালবাবু বলেন,' বিজেপি শাসিত রাজ্যে একটি নিরীহ বৈষ্ণব পরিবারের সদস্যও আর নিরাপদ নয়। বিজেপি দলটি আদতে বাঙালিদের জন্য নয়। তারা এখন হিন্দু বাঙালিদেরও সহ্য করতে পারছে না। তাই সেই রাজ্যে কাজ করতে গেলে হিন্দু বাঙালিদেরও অত্যাচারের শিকার হতে হচ্ছে। বিজেপি আসলে অ-বাঙালিদের দল। তাই এই রাজ্যের মানুষ তাদেরকে কখনই মেনে নেবে না।'

 

অন্যদিকে বিজেপির বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মলয় মহাজন বলেন, 'এই ঘটনাটি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে অকারণে কাউকে বাংলাদেশি সন্দেহে মারধরের ঘটনা আমাদের দল সমর্থন করে না। সম্ভবত কোনও উত্তেজনা থেকে ওই পরিবারের সঙ্গে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা কেউ ঘটিয়েছে।' তিনি অভিযোগ করেন,' তবে তৃণমূল কংগ্রেস চায় এই ধরনের ঘটনাকে সামনে এনে এসআইআর-এর সময় বাংলাভাষী বাংলাদেশিদেরকে এই দেশে প্রবেশ করিয়ে তাদের নাম ভোটার তালিকায় তুলতে ,যাতে আগামী ভোটে তাদের সুবিধা হয়।'