মাছ-মাংস ছাড়া অনেকেরই মুখে খাবার ওঠে। এগুলি প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎসও বটে। মানব দেহের জন্য প্রোটিন একটি অত্যাবশ্যক পুষ্টি উপাদান, যা মূলত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য প্রয়োজন। পেশী গঠন, টিস্যু মেরামত এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের রক্ষণাবেক্ষণ। বিভিন্ন পেশা এবং জীবনধারার মানুষই প্রোটিন গ্রহণ বাড়ান, কারণ তারা ফিটনেস অর্জন করতে চান, ওজন কমানো বা স্বাস্থ্যের উন্নতিও অন্যতম লক্ষ্য।
 
 
 তবে অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়ার ফলে কিডনির ক্ষতির সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কারণ দেহ রক্ত ফিল্টার করার জন্য কিডনির উপর নির্ভরশীল, যা শরীরের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
কিডনি রক্ত ফিল্টার করার মাধ্যমে প্রোটিন ভেঙে তৈরি হওয়া বর্জ্য পদার্থ শরীর থেকে বার করে। প্রোটিন ভাঙার সময় দেহে নাইট্রোজেনযুক্ত বর্জ্য তৈরি হয়, যা কিডনিকে অপসারণ করতে হয়।
 
 
 প্রোটিনের পরিমাণ যখন বেড়ে যায়, তখন দেহে গ্লোমেরুলার হাইপারফিল্ট্রেশন ঘটে। এর কারণ হল প্রোটিন বেশি গ্রহণের ফলে নাইট্রোজেন বর্জ্য উৎপাদন এবং কিডনির কাজের চাপ দুটোই বৃদ্ধি পায়। এই প্রক্রিয়ায় কিডনি উচ্চ গতিতে ফিল্ট্রেশন বা ছাঁকতে করতে থাকে।
 
 
 যদিও বলা হয়েছে, উচ্চ প্রোটিন গ্রহণ এবং কিডনির স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব নিয়ে গবেষণার ফলাফল নানা রকম এবং দ্বিমুখী। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সুস্থ মানুষের মধ্যে উচ্চ প্রোটিনযুক্ত ডায়েট কিডনির ক্ষতি ঘটায় না। যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, খেলোয়াড়, বা ওজন কমানোর জন্য উচ্চ প্রোটিন ডায়েট অনুসরণ করেন, তাঁদের কিডনি স্বাভাবিক থাকলে কোনও সমস্যা দেখা যায় না।
 
 
 তবে যাঁদের দীর্ঘমেয়াদি কিডনির সমস্যা বা কিডনির কার্যকারিতা দুর্বল, তাঁদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ ঝুঁকি বাড়ায়। দীর্ঘ সময় ধরে বেশি প্রোটিন খাওয়া কিডনির ক্ষয় ত্বরান্বিত করে এবং প্রোটিনিউরিয়া সৃষ্টি করে, যা কিডনির ক্ষতির ইঙ্গিত।
 
 এমন ব্যক্তিদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মোটামুটি পরিমাণে প্রোটিন খাওয়া এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবারে থাকা প্রাণী প্রোটিন শিম, বাদাম ও ডালজাত উদ্ভিদভিত্তিক প্রোটিনের তুলনায় কিডনির ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ায়।
 
 প্রাণীজ প্রোটিন খাওয়ার ফলে দেহের অ্যাসিডের মাত্রা এবং ফসফেটের ঘনত্ব বাড়ে, যা কিডনির কার্যকারিতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অন্য দিকে, উদ্ভিদভিত্তিক প্রোটিন ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় কিডনির জন্য ভাল এবং সহজে হজমযোগ্য।
 
 
 যাঁরা কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষা করতে চান, তাদের উচিত উদ্ভিদভিত্তিক প্রোটিনের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া, কারণ এগুলি কিডনির জন্য নিরাপদ এবং শরীরের জন্যও উপকারী।
যাঁদের কিডনি স্বাভাবিকভাবে কাজ করে এবং অন্য কোনও গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা নেই, তারা মোটামুটি পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করতে পারেন, কারণ এটি দেহের জন্য উপকারী।
 
 তবে যাঁদের দীর্ঘমেয়াদি কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, বা যাদের কিডনির সমস্যা হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি আছে, তাঁদের উচিত প্রোটিন গ্রহণ সম্পর্কে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
 
 এই ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপের মানুষরা বেশি প্রোটিন খেলে কিডনির কার্যকারিতা দ্রুত কমতে পারে। যাঁদের কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে বা কিডনি দান করেছেন, এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রোটিন গ্রহণে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
