আপনার আশপাশে এমন অনেক মানুষই রয়েছেন, যাঁরা সারাক্ষণ মুখ চালাচ্ছেন। ভালমন্দ খাবার নয়, চিউয়িং গামই তাঁদের সর্বক্ষণের সঙ্গী। সকলেই যে অভ্যাসগত কারণে এটি খান, তেমনটা নয়। কেউ কেউ মেদহীন ছুঁচলো চোয়াল পেতেও এই ‘এক্সারাসাইজ’ করে থাকেন। অতএব আশ্চর্যের কিছু নেই যে অনেকেই মুখের সুন্দর আকৃতি গঠনের আশায় সেই শুকনো, পাথরের মতো শক্ত জিনিসটি বারবার চিবিয়ে যাচ্ছেন। ভাবছেন, এতেই পাওয়া যায় কাঙ্ক্ষিত চোয়ালের কনট্যুর। কিন্তু এই প্রচলিত বিশ্বাসের পিছনে সত্যিই কি কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে? সম্প্রতি সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে বিস্তারিত জানিয়েছেন ত্বক বিশেষজ্ঞ জয়শ্রী শরদ।

ডা. শরদ বলেন, “যখন আপনি চিউয়িংগাম চিবোবেন, তখন আপনার ম্যাসেটার মাংসপেশি বড় হয়ে যাবে বা হাইপারট্রফি হবে। ফলে মুখের যে কাট বা আকৃতি আছে, সেটা আরও চওড়া দেখাবে। এতে মুখ অনেক সময় অস্বাভাবিকও দেখাতে পারে। তাই চুইংগাম খেলে চোয়াল ধারালো হয়, এটা আসলে একটা মিথ।”

চিইয়িং গামের প্যাকেটে কিন্তু চোয়াল ধারালো করার কোনও গুণ নেই। বরং এর প্রভাব ঠিক উল্টো। চোয়ালকে আরও চওড়া ও বর্গাকার করে তোলে। এই তথাকথিত শর্টকাট আপনাকে কাঙ্ক্ষিত ধারালো চোয়ালের বদলে অস্বাভাবিকভাবে চওড়া চোয়াল উপহার দিতে পারে।
তাহলে কী কাজ করে?

ডার্মাটোলজিস্ট আরও জানান, অনেক মুখভঙ্গি আসলে আপনার মুখের ক্ষতি করে। যেমন, বারবার কুঁচকে তাকানো বা চোখ কুঁচকানো, যা সূক্ষ্ম রেখা বা ফাইন লাইন তৈরি করতে পারে। একই বিষয় প্রযোজ্য দাঁত চেপে রাখা বা চোয়াল শক্ত করার ক্ষেত্রেও। এতে কিছু মাংসপেশি অতিরিক্ত ব্যবহার হয়, যার ফলে মুখ আরও চওড়া দেখাতে পারে এবং সূক্ষ্ম রেখাও তৈরি হতে পারে।

তাহলে আসলে কী কাজ করে? অবাক করার মতো হলেও, গার্গল করা কার্যকর। ডা. শরদ জানান, গার্গল করলে চোয়ালের মাংসপেশিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। জল দিয়ে হোক বা শুধু গার্গলের ভঙ্গি করেই হোক, এতে নিচের মুখের মাংসপেশি সক্রিয় হয়। এর ফলে ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়ে এবং মুখ আরও টোনড বা টানটান দেখাতে সাহায্য করে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, চিউয়িং গাম চিবিয়ে চোয়ালের শেপ বদলানো একেবারেই ভ্রান্ত ধারণা। বরং এটি উল্টো চোয়ালকে চওড়া এবং অস্বাভাবিক করে তুলতে পারে। সুস্থ এবং আকর্ষণীয় মুখাবয়ব পেতে চাইলে প্রয়োজন সঠিক অভ্যাস, নিয়মিত যত্ন এবং প্রাকৃতিক উপায়। যেমন গার্গল করা, পর্যাপ্ত জল পান, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং মুখের ব্যায়াম। এসব ছোট ছোট পরিবর্তনই সময়ের সঙ্গে আপনার মুখে এনে দিতে পারে স্বাভাবিক সৌন্দর্য ও সতেজতা।