শীতকাল মানেই পিকনিক, ভালমন্দ খাওয়া আর ঘুরে বেড়ানোর সময়। কিন্তু আর্থ্রাইটিসে বা গাঁটের ব্যথায় ভোগা মানুষদের জন্য এই ঋতু প্রায়ই এক সমস্যা নিয়ে আসে। তা হল বাড়তি ব্যথা এবং শরীরের শক্ত ভাব বা স্টিফনেস। ঠান্ডা আবহাওয়া সরাসরি আর্থ্রাইটিসের কারণ নয়, কিন্তু এটি এই রোগের লক্ষণগুলোকে বাড়িয়ে তোলে, যার ফলে দৈনন্দিন নড়াচড়া কষ্টকর হয়ে পড়ে এবং চলাফেরার ক্ষমতা সীমিত হয়। কেন শীতে আর্থ্রাইটিসের সমস্যা বেড়ে যায় এবং কিছু সহজ যত্নের মাধ্যমে কীভাবে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়— তা জানলে এই সময়টাও আরামদায়কভাবে কাটানো সম্ভব।
কেন শীতে বাড়ে গাঁটের ব্যথা
 
 
 বেঙ্গালুরুর অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা. সমর্থ আর্য বলেন, “শীতে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় জয়েন্টের ভিতরের তরল ঘন হয়ে যায় এবং গাঁটের চারপাশের রক্তনালী সঙ্কুচিত হয়। এর ফলে হাত, হাঁটু ও নিতম্বে ব্যথা এবং শক্তভাব বাড়ে।”
 
 
 ঠান্ডা আবহাওয়ায় বায়ুচাপের পরিবর্তনও ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। সূর্যালোক কম পাওয়ায় শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা দেয়, যা হাড় এবং জয়েন্টের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। পাশাপাশি ঠান্ডা আবহাওয়ায় ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হয়ে ওঠে, যার ফলে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গাউটের মতো অটোইমিউন রোগে প্রদাহ বেড়ে যায়। ডা. আর্য আরও বলেন, “শীতে ওজন বৃদ্ধি এবং ব্যথা অনুভব করার রিসেপ্টরগুলোর সংবেদনশীলতা বেড়ে যাওয়াও সমস্যাকে আরও বাড়ায়।”
 
 রিউমাটোলজিস্ট ডা. আশলেশা শুক্লা যোগ করেন, “ঠান্ডায় পেশি সঙ্কুচিত হয়, রক্ত সঞ্চালন কমে যায়, ফলে গাঁটগুলো শক্ত হয়ে যায় এবং বিশেষ করে হাত, হাঁটু ও নিতম্বে ব্যথা তীব্র হয়।”
কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন শীতের আর্থ্রাইটিস
 
 
 দুই বিশেষজ্ঞই একমত যে, সক্রিয় থাকা শীতে গাঁটের ব্যথা কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়। ডা. শুক্লা জানান, “হালকা ব্যায়াম, যোগব্যায়াম বা অল্প হাঁটাচলা শরীরকে নমনীয় রাখে এবং রক্ত চলাচল বাড়ায়। গরম পোশাক পরা, হিটিং প্যাড ব্যবহার বা গরম জলে স্নান — এগুলো জয়েন্টের শক্তভাব কমাতে দারুণ সাহায্য করে।”
 
 
 ডা. আর্য পরামর্শ দেন, ঘরে বসেই হালকা ইনডোর এক্সারসাইজ করা উচিত যাতে পেশি ও জয়েন্টের কার্যক্ষমতা ঠিক থাকে। তিনি বলেন, “ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের মতো পুষ্টি উপাদান প্রদাহ কমাতে এবং আরাম দিতে সাহায্য করে।”
 
 এছাড়াও, নিয়মিত ওষুধ খাওয়া এবং চিকিৎসকের সঙ্গে ফলো-আপ চালিয়ে যাওয়া জরুরি, যাতে উপসর্গ বেড়ে গেলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
জীবনযাপনের কিছু সহজ পরিবর্তন
 
 
 কিছু সাধারণ অভ্যাসও ব্যথা নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা নিতে পারে। যেমন—
 
 গরম পোশাক বা থার্মাল পরা
 
 ঘর গরম রাখা
 
 পর্যাপ্ত জল পান করা
 
 পুষ্টিকর ও হালকা খাবার খাওয়া
 
 ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
