আজকাল ওয়েবডেস্ক: দুর্গাপুরের চাঞ্চল্যকর মেডিকেল ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় একের পর এক নতুন তথ্য সামনে আসছে। ওড়িশার বাসিন্দা দ্বিতীয় বর্ষের এক মেডিকেল ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে নির্যাতিতার এক সহপাঠীও রয়েছে, যাকে নিয়ে ঘটনার সূচনা হয়েছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সহপাঠীর হস্টেল রুমে তল্লাশি চালিয়ে ১১টি অব্যবহৃত কন্ডোম উদ্ধার হয়েছে। পাশাপাশি, ঘটনাস্থল হিসেবে চিহ্নিত পরাণগঞ্জের জঙ্গল থেকে আরও একটি অব্যবহৃত কন্ডোম উদ্ধার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, সহপাঠী ছাত্রটি একটি সম্পূর্ণ কন্ডোম প্যাকেট কিনেছিল, যার মধ্যে ১১টি তার ঘরে পাওয়া গেছে এবং একটি ঘটনাস্থল থেকে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই কন্ডোম উদ্ধারের বিষয়টি মামলার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে। কারণ, এই সূত্র থেকেই পরিষ্কার ইঙ্গিত মিলছে যে সহপাঠী ছাত্রটি ওই ছাত্রীকে জঙ্গলে নিয়ে গিয়েছিল। তবে ঘটনার প্রকৃত ধরন জানতে পুলিশ অপেক্ষা করছে ফরেনসিক পরীক্ষার ফলাফলের জন্য, যা প্রকাশ পেলে বহু ধোঁয়াশা দূর হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, গত ১০ অক্টোবর রাতে দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্র ও ছাত্রী একসঙ্গে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে যায়। তারা প্রেমের সম্পর্কে ছিল প্রায় পাঁচ মাস ধরে। সেই রাতেই পরাণগঞ্জের জঙ্গলে তাদের ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলে বিজড়া গ্রামের পাঁচ যুবকের মধ্যে তিনজন। পরবর্তীতে আরও দুই যুবক সেখানে পৌঁছায়।
আরও পড়ুন: বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াকে ধর্ষণের অভিযোগ, দুর্গাপুরে ব্যাপক চাঞ্চল্য
পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তরা প্রথমে ছাত্র-ছাত্রী দুজনের কাছ থেকে টাকা দাবি করে। কিন্তু তাদের কাছে দাবি করা টাকা না থাকায় সহপাঠী যুবক নির্যাতিতাকে সেখানে রেখে টাকা আনতে যায় বলে অভিযোগ। এরপর কী ঘটেছিল, তা নিয়েই এখন তদন্তের মূল দিক নির্দেশিত হচ্ছে — যুবক তখনই কি বান্ধবীকে ফেলে চলে গিয়েছিল, নাকি তার সামনেই ধর্ষণ করা হয়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
নির্যাতিতার বয়ান অনুযায়ী, তাঁকে একজনই ধর্ষণ করেছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে — গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনের মধ্যে কে সেই ব্যক্তি? পুলিশের দাবি, ফরেনসিক রিপোর্ট ও ডিএনএ পরীক্ষার পরেই এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এখন পর্যন্ত ছয়জনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের মধ্যে অভিযুক্ত সহপাঠী ছাত্রসহ সবাইকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল কল রেকর্ড এবং ফরেনসিক প্রমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঘটনার পর থেকেই দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। কলেজ চত্বরে মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী। স্থানীয় বাসিন্দারা ও ছাত্রসমাজ দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন। অন্যদিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরেও সম্প্রতি এক নাবালিকা ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। মহাষ্টমীর রাতে প্রেমিক ও তার দুই বন্ধুর দ্বারা নবম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্রেই এই ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে।
একই সময় রাজ্যের দুই প্রান্তে পরপর দুই ধর্ষণকাণ্ডে আতঙ্ক ও ক্ষোভে ফুঁসছে সাধারণ মানুষ। প্রশাসন জানিয়েছে, দুটি মামলাতেই নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
