আমাদের রান্নাঘরে এমন অনেক উপাদানই আছে, যা হার্টের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত উপকারী। তার মধ্যেই একটি পরিচিত মশলা হল লবঙ্গ—যা প্রায় প্রতিটি ভারতীয় হেঁশেলে পাওয়া যায় এবং রান্নায় নিয়মিত ব্যবহৃত হয়।

রোজ একটি লবঙ্গ খাওয়া হৃদস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। কারণ এটি শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (LDL) কমায় এবং উপকারী কোলেস্টেরল (HDL) বৃদ্ধি করে।

অনেক স্বাস্থ্য–ইনফ্লুয়েন্সার এবং ওয়েলনেস এক্সপার্ট দাবি করেন, লবঙ্গ একটি ‘সুপারফুড’ যা হার্ট এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। কিন্তু এটি সত্যিই এতটা কার্যকরী নাকি শুধুই প্রচারণা?

কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ দিনেশ রাজ লবঙ্গ নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা দূর করেছেন।
লবঙ্গের উপকারী উপাদান

ডাঃ রাজের মতে, “লবঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ইউজেনল নামক যৌগ থাকে, যা প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। এই দু’টি কারণই হৃদরোগের প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান।”

তিনি আরও বলেন, “প্রতিদিন একটি লবঙ্গ খাওয়া হৃদস্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে, কারণ এটি খারাপ কোলেস্টেরল কমায়, ভাল কোলেস্টেরল বাড়ায়, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।”

লবঙ্গ কি সত্যিই হৃদস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী?
ডাঃ রাজ ব্যাখ্যা করেন, “লবঙ্গের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ শরীরে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং কার্ডিওভাসকুলার ফাংশন ভাল রাখে। এটি কোনও মিথ নয়, বরং একটি প্রমাণিত উপকারিতা যদি এটি সুষম খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসাবে গ্রহণ করা হয়।”

তিনি আরও বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে, লবঙ্গ খারাপ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়। ভাল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি এটি শরীরের প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।”

অন্যান্য উপকারিতা
ডাঃ রাজের মতে, প্রতিদিন একটি লবঙ্গ খাওয়া শুধুমাত্র হার্টের জন্য নয়, বরং শরীরের আরও বিভিন্ন উপকারে আসে। এটি—
হজমে সহায়তা করে,
মুখের দুর্গন্ধ ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে,
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়,
ব্যথা ও প্রদাহ কমায়,
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে,
যকৃতের কার্যক্ষমতা উন্নত করে।
লবঙ্গ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণে সমৃদ্ধ এবং এতে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণ যেমন ম্যানগানিজ ও ভিটামিন কে রয়েছে।

সতর্কতা
ডাঃ রাজ সতর্ক করে বলেন, “লবঙ্গ পরিমিত পরিমাণে, সাধারণত দিনে একটি বা দু’টি খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত গ্রহণ ইউজেনল যৌগের প্রভাবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “লবঙ্গ তেল অত্যন্ত ঘন এবং এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান বা লবঙ্গে অ্যালার্জি আছে, তাদের নিয়মিত গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।”

বিশ্বব্যাপী হৃদরোগ বর্তমানে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হৃদরোগে প্রায় দু’কোটি পাঁচ লাখ মানুষ মারা গিয়েছেন, যা মোট বিশ্বেক মৃত্যুর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি পাঁচজনের একজনের মৃত্যু হৃদরোগজনিত। তাই সুস্থ জীবনযাপন এবং হৃদবান্ধব খাবার খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করা এখন সময়ের দাবি।