অনেক দিন আগে সবজি কাটতে গিয়ে ছুরিতে হাত কেটে বসেছেন। বা পড়ে গিয়ে ছড়ে গিয়েছে পা। দীর্ঘ সময় পার হলেও সেই ক্ষত শুকোতে চাইছে না? শরীর দিতে পারে বড় ইঙ্গিত। বেশিরভাগ ক্ষতই সাধারণ যত্নে স্বাভাবিকভাবে সেরে যায়। কিন্তু কোনও ক্ষত যদি না সারতে চায় বা সপ্তাহের পর সপ্তাহ প্রদাহজনিত অবস্থায় থাকে, তবে তা শরীরে ভিতরের কোনও গুরুতর সমস্যার সঙ্কেত হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, যে ক্ষত স্বাভাবিক নিরাময়ের ধাপগুলো অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়, তাকে বলা হয় ক্রনিক ক্ষত। এই ধরনের ক্ষত শরীরে দুর্বল রক্তসঞ্চালন, ডায়াবেটিস বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতির ইঙ্গিত দিতে পারে। বিরল ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত কোনও অন্তর্নিহিত ক্যানসারেরও লক্ষণ হতে পারে।

চিকিৎসক শ্রদ্ধা দেশপাণ্ডে বললেন, “অধিকাংশ মানুষ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতকে উপেক্ষা করেন অথবা বারবার ড্রেসিং এবং অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যান”। তিনি ব্যাখ্যা করেন, “যদি কোনও ক্ষত সঠিক যত্ন সত্ত্বেও না সারে, তবে অবশ্যই বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করা উচিত। অনেক সময় ক্ষত কেবল উপরের চামড়াতেই সীমাবদ্ধ থাকে না। সময় মতো বায়োপসি বা গভীরতর মূল্যায়ন চিকিৎসার পুরো ধারা বদলে দিতে পারে এবং জীবনও বাঁচাতে পারে।”
চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন এমন সতর্ক সঙ্কেত গুলির মধ্যে রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, ফোলা, লালচেভাব, বারবার পুঁজ বা তরল নির্গমন, ক্ষতের চারপাশে নড়াচড়ায় অসুবিধা। এসব উপসর্গ উপেক্ষা করলে রোগ নির্ণয়ে দেরি হতে পারে এবং অবস্থার অবনতি ঘটতে পারে।

চিকিৎসকরা সাধারণত ইমেজিং, কালচার এবং টিস্যু বায়োপসির মতো আধুনিক পরীক্ষা ব্যবহার করে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতের আসল কারণ খুঁজে বের করেন। এই ধরনের ক্ষত অনেক সময় বারবার সংক্রমণ, রক্ত সরবরাহের ঘাটতি, ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা কিংবা দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে তৈরি হয়। কিছু ক্ষেত্রে এটি এমনকি ক্যানসারেরও প্রাথমিক ইঙ্গিত হতে পারে, তাই দ্রুত সঠিক মূল্যায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মূল কারণ শনাক্ত হওয়ার পর চিকিৎসা পদ্ধতি ক্ষতের ধরন এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে থাকতে পারে বিশেষায়িত এবং আধুনিক ক্ষত-ড্রেসিং, কার্যকর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে ক্ষত অপসারণ, রিকনস্ট্রাকটিভ বা প্লাস্টিক সার্জারি, যা ক্ষতস্থলের সৌন্দর্য এবং কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধারে সহায়ক।

ডা. দেশপান্ডে জোর দিয়ে বলেন, “ক্ষতের পাশাপাশি অন্তর্নিহিত রোগের চিকিৎসা করা হলে সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়। এতে শুধু ক্ষত সেরে ওঠে না, রোগীর সামগ্রিক সুস্থতাও নিশ্চিত হয়।”

ওকহার্ট হাসপাতালের একটি কেসে দেখা যায়, দীর্ঘদিন অ্যান্টিবায়োটিক সত্ত্বেও না সারানো একটি ক্ষতের গভীরতর তদন্তে ধরা পড়ে লিম্ফোমার পুনরাবৃত্তি। এই উদাহরণটি স্পষ্ট করে দেয় যে সময় মতো সঠিক মূল্যায়ন কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত কেবল শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর নয়, রোগীর চলাফেরা, দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং সার্বিক জীবনমানের ওপরও প্রভাব ফেলে। ক্রমাগত প্রদাহ গৌণ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়, আর চিকিৎসাহীন অবস্থায় অন্তর্নিহিত রোগ নীরবে অগ্রসর হতে থাকে।
সময়মতো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে রোগ নির্ধারণ করা সম্ভব। পাশাপাশি রোগীদের পরামর্শ দেওয়া হয় সঠিক ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে। ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা। ক্ষত নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে এবং পরিবর্তন হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে।