দুর্গাপুজো শেষ। এবার বিজয়া করার পালা। প্রণাম আর কোলাকুলির পরেই প্রিয়জনেরা প্লেটে সাজিয়ে দেন মিষ্টির পসরা। এ যেন ভালবাসা আর যত্নের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু একটানা মিষ্টি খাওয়ার ফলে দাঁত এবং মাড়ির ক্ষতি হতে পারে। চিনি, স্টার্চ এবং অ্যাসিড অনেক সময় খাবারের পরে দাঁতের উপর জমে থাকে, যা দাঁতের ক্ষয় এবং মাড়ি সংক্রান্ত সমস্যা বাড়ায়। মিষ্টি পুরোপুরি এড়ানো সমাধান নয়। মূল চ্যালেঞ্জ হল—উৎসবের মজা এবং দাঁতের স্বাস্থ্য দুটোই বজায় রাখা। কী করবেন জানাচ্ছেন দুই দাঁতের চিকিৎসক।
ডা. জেনিল পারেখ বলেন, “সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলিতে মিষ্টি আশীর্বাদ বহন করে। কিন্তু এই খাবারগুলোর অনেকটাই চিনি, স্টার্চ এবং অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। এগুলো দাঁতের ক্ষয়, প্ল্যাক বৃদ্ধি এবং মাড়ির রোগের মূল কারণ।”
ডা. সুমন যাদব যোগ করেছেন, “অতিরিক্ত চিনি মুখের ব্যাকটেরিয়া বাড়ায়, যা ক্যাভিটি, মাড়ির সমস্যা এবং মুখের দুর্গন্ধের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।” সমস্যা কোনও একটি মিষ্টি নয়, বরং নিয়মিত অতিরিক্ত খাওয়া এবং ঠিকমতো মুখের পরিচর্যা না করা।
চিকিৎসকদের মতে, সঠিক ভারসাম্য মানে মিষ্টি পুরোপুরি এড়ানো নয়। আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, কিন্তু পরিমাণ সীমিত রাখুন। খাবার বেছে নেওয়ার সময় সচেতন থাকুন। কম পরিমাণ মিষ্টি খান। ক্যারামেল বা লাড্ডুর মতো চিপচিপে খাবার এড়ান, এবং ডার্ক চকলেট বা ফলের মতো স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নিন। চিপচিপে মিষ্টি দাঁতে বেশি সময় ধরে থাকে এবং পরিষ্কার করা কঠিন হয়, যা ক্ষয় বাড়ায়। খাবারের সঙ্গে জল খাওয়া খাবারের অবশিষ্টাংশ ধোয়া এবং অ্যাসিড প্রশমনে করতে সাহায্য করে।
দাঁতের বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিয়মিত মুখের পরিচর্যা সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। ডা. পারেখের পরামর্শ, দিনে দু’বার ব্রাশ করুন, একবার ফ্লস ব্যবহার করুন, বিশেষত ভারী খাবারের পরে। অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্য অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন। খাওয়ার পর যদি সরাসরি ব্রাশ করা সম্ভব না হয়, তবে জল দিয়ে মুখ ধোয়া ভালো বিকল্প।
ডা. যাদব বলেন, যেখানে খাওয়ার পর ব্রাশ করা সম্ভব নয়, সেখানে চিনি মুক্ত চিউইং গাম চিবানো মুখের লালা বৃদ্ধি করে এবং ক্ষয় প্রতিরোধে কার্যকর। লালা স্বাভাবিকভাবে মুখ পরিষ্কার করতে এবং ভারসাম্য পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে।
উৎসব উপভোগের জন্য এবং খাবার সেই উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু। সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠি হল পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ এবং সচেতনতা। কম খাওয়া, চিপচিপে মিষ্টি এড়ানো, পর্যাপ্ত জল খাওয়া এবং নিয়মিত মুখের পরিচর্যা নিশ্চিত করলে দাঁতের কোনও রকম ক্ষতি না করেই উৎসবের আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব।
