শরীরের দুর্গন্ধ একটি সাধারণ সমস্যা, যা অনেকেই লজ্জার কারণ হিসেবে মনে করেন। তবে এই দুর্গন্ধের মূল কারণ শুধুমাত্র অপরিচ্ছন্নতা বা হাইজিনের অভাব নয়। অনেক সময়, আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস বা হরমোনের পরিবর্তনও এই দুর্গন্ধের জন্য দায়ী হতে পারে। পুষ্টিবিদ নমামি আগরওয়াল সম্প্রতি একটি ইনস্টাগ্রাম ভিডিওতে এই বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং শেয়ার করেছেন কীভাবে এই সমস্যা মোকাবিলা করা যেতে পারে।
শরীরের দুর্গন্ধের প্রধান কারণ সাধারণত আমাদের ঘাম এবং ব্যাকটেরিয়ার কার্যক্রম। শরীরের কিছু অংশে, যেমন বাহুমূলে বা পায়ে বেশি ঘাম তৈরি হয়, যেখানে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। তবে, শুধু ঘাম নয়, খাদ্যাভ্যাসেরও এই সমস্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যেমন, মসলা, পেঁয়াজ, রসুন, অথবা অতিরিক্ত মাংস এবং তেলের খাবার খেলে শরীরে দুর্গন্ধ তৈরি হতে পারে। এমনকি কফি, অ্যালকোহল বা ধূমপানও এই সমস্যা আরও বাড়াতে পারে।
তবে এই সমস্যার সমাধান আছে। প্রথমত, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত স্নান করা, ভাল ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করা এবং পরিষ্কার জামাকাপড় পরিধান করা নিশ্চিত করুন। পাশাপাশি, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি।
তাজা ফলমূল, শাকসবজি, এবং জল খাওয়া বৃদ্ধি করলে শরীরের দুর্গন্ধ কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে। দ্বিতীয়ত, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম শরীরের টক্সিন বের করে দেওয়ার মাধ্যমে ঘামের দুর্গন্ধ কমাতে সহায়তা করতে পারে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মানসিক শান্তি বজায় রাখা। কখনও কখনও স্ট্রেস বা উদ্বেগও শরীরের দুর্গন্ধ বাড়াতে পারে। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিলেই শরীরের সুস্থতা বজায় থাকবে। পুষ্টিবিদ নমামি আগরওয়াল এই সব বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দিয়েছেন এবং কার্যকরী পরামর্শ দিয়েছেন যাতে সবাই নিজেদের শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে পারে এবং সঙ্গত কারণে লজ্জায় না পড়তে হয়। শরীরে দুর্গন্ধ হলে চিন্তার কিছু নেই—এটি ঠিকমতো পরিচালনা করা সম্ভব, এবং ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন আপনাকে সহজেই মুক্তি দিতে পারে!
শরীরে দু’ধরনের ঘাম গ্রন্থি রয়েছে:
১. একক্রাইন গ্রন্থি
আপনার সারা শরীরে পাওয়া যায়, এগুলি একটি স্বচ্ছ, গন্ধহীন ঘাম উৎপন্ন করে যা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
2. অ্যাপোক্রাইন গ্রন্থি
আপনার বাহুমূল এবং কুঁচকির মতো জায়গায় অবস্থিত, এই গ্রন্থিগুলি ঘন ঘাম নির্গত করে যা ব্যাকটেরিয়া ভেঙে ফেলতে পছন্দ করে — যার ফলে শরীরের দুর্গন্ধ হয়।
ঘামের নিজে থেকে কোনও গন্ধ হয় না, কিন্তু যখন এটি আপনার ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার সাথে মিশে যায়, তখন এটি সেই পরিচিত গন্ধ তৈরি করে। স্ট্রেস, ডায়েট, হরমোন এবং স্বাস্থ্যবিধির মতো বিষয়গুলি গন্ধ কতটা তীব্র হয় তার উপর ভূমিকা পালন করে।
মশলাদার খাবার, ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল আপনার ঘাম আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে, অন্যদিকে প্রক্রিয়াজাত খাবার শরীরের দুর্গন্ধকে তীব্র করে তুলতে পারে। সতেজ থাকার জন্য, হাইড্রেটিং খাবার, তাজা ফল এবং শাকসবজি খান যা আপনার শরীরকে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ঘাম শুষে নিতে এবং ত্বক ঠান্ডা রাখতে সুতি এবং লিনেন জাতীয় কাপড় অথবা আর্দ্রতা শোষণকারী উপাদান বেছে নিন। টাইট, সিন্থেটিক পোশাক এড়িয়ে চলুন কারণ এগুলো তাপ এবং আর্দ্রতা আটকে রাখে, যার ফলে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া জন্মায়।
