র্গাপুজোর পর এবার বিজয়ার পালা। তার সঙ্গেই লক্ষ্মীপুজো। কয়েকদিন পর আবার আলোর উৎসব। বাঙালির কাছে উৎসব মানেই খাওয়াদাওয়া। মন্ডামিঠাই, ভাজাভুজি দিয়ে চলে পেটপুজো। এই সব উদযাপন আনন্দের উৎস হলেও, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা থাকলে এগুলো হৃৎপিণ্ডের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত চিনি, সোডিয়াম এবং তীব্র ব্যস্ততার চাপ ব্লাড সুগার এবং রক্তচাপ বাড়াতে পারে। তাই উৎসবকে উপভোগ করার সঙ্গে সচেতনতা বজায় রাখা জরুরি।
চিনি এবং তার প্রভাব
“বেশিরভাগ উৎসবের মিষ্টি অত্যধিক রিফাইন্ড চিনি এবং ঘি দিয়ে তৈরি হয়। হঠাৎ চিনি বেশি খেলে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায় এবং ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ে। যদি এটি নিয়মিত হয়, তবে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে এবং সময়ের সঙ্গে টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং অ্যাথেরোসক্লেরোসিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে,” বলেন ডঃ প্রিয়া পলিমকার।
তিনি আরও বলেন, “আপনার প্রিয় মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করার দরকার নেই, তবে পরিমাণ কম করুন এবং সম্ভব হলে খেজুর বা গুড় দিয়ে তৈরি মিষ্টি বেছে নিন। মিষ্টির সঙ্গে কিছু বাদাম বা প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে চিনি ধীরে ধীরে শোষিত হয় এবং রক্তে গ্লুকোজ স্থিতিশীল থাকে।"
নুন: হৃদয়ের অদৃশ্য চ্যালেঞ্জ
লবণযুক্ত খাবার এবং সস রক্তচাপ বাড়াতে পারে। ডঃ পলিমকার বলেন, “অতিরিক্ত সোডিয়াম সরাসরি রক্তচাপ বাড়ায় এবং হার্টকে বেশি কাজ করতে বাধ্য করে, একই সঙ্গে ধমনির ক্ষতি ত্বরান্বিত করে।”
মুম্বইয়ের লিলাবতী হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট ডঃ শ্রীনিবাস কুডভা যোগ করেন, “ফ্যাটযুক্ত লবণাক্ত খাবার সোডিয়াম বৃদ্ধি করে, যার ফলে শরীরে অতিরিক্ত জল ধরে থাকে এবং রক্তচাপ বাড়ে, যা সরাসরি হার্টের কাজকে প্রভাবিত করে।”
ডঃ পলিমকার বলেন, “ঘরে তৈরি খাবার নুনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, এবং প্যাকেজড খাবার পরিবেশন করার আগে ধুয়ে নিলে অতিরিক্ত সোডিয়াম কমানো যায়। হার্বস, লেবুর রস এবং মশলা ব্যবহার করে স্বাদ বাড়ানো সম্ভব, যা হৃদয়ের জন্য নিরাপদ।”
চাপ এবং ঘুম নিয়ন্ত্রণ
উৎসবের সময় দেরিতে ঘুম, অনিয়মিত খাবার এবং অসংখ্য সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকে। “উৎসবের উত্তেজনা কর্টিসল হরমোন বাড়ায়, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকে ব্যাহত করে এবং অস্বাস্থ্যকর খাওয়ার প্রবণতা বাড়ায়,” বলেন ডঃ কুডভা। ডঃ পলিমকার বলেন, “প্রতিদিন অন্তত সাত ঘণ্টা ভাল ঘুম নিশ্চিত করুন এবং ২০–৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করার সময় বের করুন। শুধু কয়েক মিনিটের গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস বা মেডিটেশনও চাপ কমাতে এবং হৃদস্পন্দন স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।” উৎসবের আনন্দ উপভোগ করুন, কিন্তু শরীর ও হৃদয়ের যত্নও ভুলবেন না।
