আজকাল ওয়েবডেস্ক: ওড়িশার রাজধানী ভূবনেশ্বরে এক ১৭ বছর বয়সি কিশোরীকে নৃশংসভাবে গণধর্ষণের অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার গভীর রাতে অশোকনগর এলাকার রাস্তায় অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় ওই নাবালিকাকে। স্থানীয়রা প্রথমে তাঁকে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী বলে মনে করেছিলেন। পরে একদল অটোচালক ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে উদ্ধার করে রাজধানী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করেন।
ভূবনেশ্বর–কটক পুলিশের কমিশনার এস. দেব দত্ত সিং জানিয়েছেন, “মেয়েটিকে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে। সে বর্তমানে আইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন। তার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনার আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই নাবালিকাকে বর্বরভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে এবং তিনি গভীর মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন। এক হাসপাতাল কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “মেয়েটি স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারছে না, তবে সে ইঙ্গিত দিয়েছে যে সে বিহারের বাসিন্দা।”
ঘটনার খবর জানার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই পুলিশকে সতর্ক করে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের মামলা রুজু করা হয়েছে। “মেয়েটির পরিচয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি অভিযুক্তদের সনাক্তকরণে পুলিশ একাধিক সূত্র ধরে তদন্ত চালাচ্ছে,” পুলিশ কমিশনার জানান।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে ওড়িশার অপরাধের হার বর্তমানে দেশের অন্যতম উচ্চ — রাজ্যে শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের হার ৫৯.৫ শতাংশ, যা ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে ১৪৪.১ লক্ষ শিশু জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারিত। ২০২৩ সালে এই ধরনের মামলায় চার্জশিট দাখিলের হার ছিল মাত্র ৪১.৫ শতাংশ, যা দেশের মধ্যে সর্বনিম্নের মধ্যে একটি। আদালতে মামলার বিচারাধীন থাকার হার প্রায় ৯০ শতাংশে পৌঁছেছে।
পুলিশের এক সিনিয়র অফিসার বলেন, “এই ঘটনা শুধুমাত্র একক অপরাধ নয়, বরং রাজ্যে নারী ও শিশু সুরক্ষার ব্যর্থতার কঠিন প্রতিচ্ছবি। দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে দোষীদের কড়া শাস্তি দেওয়া হবে।” রাজ্যজুড়ে এই ঘটনার নিন্দা শুরু হয়েছে। সমাজকর্মী ও শিশু অধিকার সংগঠনগুলি দাবি করেছে, মেয়েটিকে বিশেষ সুরক্ষায় রাখা হোক এবং তদন্তের অগ্রগতি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক।
ভূবনেশ্বরের হাসপাতাল চত্বরে ইতিমধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মেয়েটির শারীরিক অবস্থার আপডেট ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে চিকিৎসক দল।
