আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলাদেশে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ফাঁসির দাবি তুলেছে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। গত বছরের ছাত্র-আন্দোলনে ভয়াবহ দমনপীড়নের ঘটনায় তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। এই ঘটনায় অন্তত ১,৪০০ জন নিহত হন, যা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হিংসা বলে মনে করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি তাজুল ইসলাম বৃহস্পতিবার আদালতে বলেন, “শেখ হাসিনার উচিত ১,৪০০ বার মৃত্যুদণ্ড পাওয়া। কিন্তু যেহেতু তা সম্ভব নয়, অন্তত একবার মৃত্যুদণ্ডই ন্যায়বিচার।” তিনি অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা ইচ্ছাকৃতভাবে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে। একটি ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপে শোনা গেছে, হাসিনা নিজে পুলিশ ও র‍্যাবকে নির্দেশ দিচ্ছেন— “মারণ অস্ত্র ব্যবহার করো।”

২০২৪ সালের জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের আত্মীয়দের জন্য কোটা সংরক্ষণবিরোধী আন্দোলন থেকেই এই গণআন্দোলনের সূচনা। পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে তা ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। শেষ পর্যন্ত আন্দোলন পরিণত হয় শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের পতনের লড়াইয়ে।

আরও পড়ুন: ‘‌আমি যুদ্ধ থামাতে ভালবাসি’‌, আফগানভূমে পাক এয়ারস্ট্রাইকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট আর যা বললেন শুনলে ভিরমি খাবেন

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিন ছিল ৫ আগস্ট— যখন শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে যান ঢাকায় নিজের সরকারি বাসভবন থেকে। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্ষুব্ধ জনতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে, শহরের নানা জায়গায় অগ্নিসংযোগ করে। সেদিন ঢাকার ব্যস্ত মহল্লায় পুলিশের গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি-এর তদন্তে উঠে এসেছে, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে পুলিশের অন্যতম নৃশংস অভিযান।

রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ, শেখ হাসিনার উদ্দেশ্য ছিল “নিজে ও নিজের পরিবারকে আজীবন ক্ষমতায় রাখার।” তাজুল ইসলাম আদালতে বলেন, “তিনি একজন কঠোর অপরাধীতে পরিণত হয়েছেন, এবং নিজের বর্বরতার জন্য বিন্দুমাত্র অনুতাপ দেখাননি।” অন্যদিকে, শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী দাবি করেছেন, পুলিশ কেবল আত্মরক্ষার জন্যই গুলি চালায়, কারণ আন্দোলনকারীরা ছিল হিংসাত্মক। তবে আদালতে সেই যুক্তি কার্যত গুরুত্ব পায়নি।

এই মামলায় হাসিনার সঙ্গে অভিযুক্ত হয়েছেন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও প্রাক্তন পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। কামাল বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন, তার বিরুদ্ধেও মৃত্যুদণ্ডের দাবি তোলা হয়েছে। অপরদিকে, চৌধুরী জুলাই মাসে দোষ স্বীকার করেছেন, যদিও এখনো তার সাজা ঘোষণা হয়নি।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এর আগেও আদালত অবমাননার অভিযোগে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলা চলছে। বর্তমানে তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। এই নির্বাচনে হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি এগিয়ে রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনুমান। হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে ইতিমধ্যেই সব রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সম্ভবত এটাই সবচেয়ে নাটকীয় মুহূর্ত— যেখানে এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের মুখে পড়তে হচ্ছে, আর দেশ তাকিয়ে আছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।