মহেশ ভাট। বলিউডের অন্যতম বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। কাজ তো বটেই, তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও চর্চা কম নয়। পারভীন বাবির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হোক বা বয়সে ছোট রিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন, মহেশের চারিত্রিক পরিচ্ছন্নতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে পরিচালকের স্ত্রী সোনি রাজদান জানান, মহেশকে বিয়ে করার পর থেকে কাজ পাচ্ছিলেন না তিনি। ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ কয়েক বছর কাটিয়ে ফেলেও কেরিয়ারে কঠিন সময়ের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে।
সোনি এক সাক্ষাৎকারে শিল্পজগতের লিঙ্গবৈষম্যমূলক বাস্তবতার কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, মহেশ ভাটের স্ত্রী হওয়ার পর থেকেই কাজের প্রস্তাব ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এক সময় যে অভিনয়ের সুযোগ নিয়মিত আসত, তা যেন হঠাৎ করেই থেমে গেল। তাঁর মতে, এর নেপথ্যে মূল কারণ ছিল চলচ্চিত্রজগতের গভীরে প্রোথিত থাকা ‘সেক্সিস্ট’ মানসিকতা, যেখানে একজন নারীকে তাঁর প্রতিভার বদলে ব্যক্তিগত পরিচয় দিয়ে বিচার করা হয়।
বলিউডে নারীদের প্রতি অতীত দিনের আচরণ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সোনি বলেন, “আমি আসলে এই ইন্ডাস্ট্রির মাঝেই বড় হয়েছি। এত বছর ধরে কাজ করার ফলে আমি এর ভিতরের পরিবর্তনগুলো খুব কাছ থেকে দেখেছি। আজকের দিনটা একেবারেই প্রায় ভিন্ন এক পৃথিবীর মতো মনে হয়। যখন আমি শুরু করেছিলাম, তখন বেশ ভাল কাজ পাচ্ছিলাম, কেরিয়ারও ভালই এগোচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই বিয়ে হওয়ার পর সব বদলে গেল। এরপর আর কোনও কাজ আসছিল না।”
সোনি জানান, কাজের অভাবের মাঝে যখন তিনি সবটা বুঝে ওঠার চেষ্টা করছেন, তখনই রমেশ সিপ্পি আর জ্যোতি সরূপের টেলিভিশন সিরিজ ‘বুনিয়াদ’ তাঁর ঝুলিতে এসে পড়ে। আর সেখান থেকেই বদল আসতে শুরু করে অভিনেত্রীর পেশাগত জীবনে। সোনি বলেন, “শুনেছিলাম, ‘এখন তো উনি অমুকের স্ত্রী, কাজ করার কী দরকার?’ এই মন্তব্যে আমি ভীষণ রেগে গিয়েছিলাম! কিন্তু ভাগ্যক্রমে ‘বুনিয়াদ’ হলো, আর তার পর ভাল কিছু সিনেমার কাজও পেলাম। তবে তার আগে ভীষণ হতাশ লাগত।”
দীর্ঘদিন ধরে বলিউডকে কাছ থেকে দেখছেন সোনি। আজকের চলচ্চিত্র শিল্পের পরিবর্তনকে তাঁর কাছে ইতিবাচক। তিনি বলেন, “এখনকার ইন্ডাস্ট্রিকে আমি কুর্নিশ জানাই, কারণ এখানে আর মহিলাদের প্রতি সেই বৈষম্য নেই। আজকের অভিনেত্রীরা নিজের মতো করে কাজ করতে পারে। তাঁদের জীবনকে থামিয়ে রাখা যায় না! আমরা এক সময় শুধু কাজের জন্য আমাদের ব্যক্তিগত জীবনকে অনেকটা পিছিয়ে দিতাম। কী হাস্যকর ছিল সেটা! একজন অভিনেতা, সঙ্গীতশিল্পী বা শিল্পী হতে গেলে আগে জীবনটাকে সত্যিকারের বাঁচতে হয়। চার দেওয়ালের ভিতরে বসে থেকে সেটা সম্ভব নয়।”
 
 
 তবে এত সাফল্য অর্জনের পরও সোনির মনে এক আক্ষেপ রয়ে গেছে। বর্ষীয়াণ অভিনেত্রীর কথায়,  “আমার জীবনর সব সময়, এমনকি এখনও, আমি অন্য কারও পরিচয়ে পরিচিত। হয় আলিয়ার মা, নয়তো মহেশ ভাটের স্ত্রী। আমার সংগ্রাম এখনও একই। আমি যেন আমার নিজের পরিচয়ে স্বীকৃতি পাই। আমার আশপাশের মানুষরা খুব ভাল কাজ করছে। এতে আমি খুশি এবং কৃতজ্ঞ। কিন্তু হয়তো আমার যাত্রাপথ এমনই হওয়ার কথা ছিল। এখন আমি এটা নিয়ে হাসি, মজা পাই, আর ভেবে নিই, ঠিক আছে, এভাবেই চলুক।”
