বর্তমান সময়ে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই ভুলে যাওয়া, মনোযোগ কমে যাওয়া বা কথাবার্তা গুলিয়ে ফেলার সমস্যায় ভোগেন। চিকিৎসা পরিষাভায় যাকে বলে ডিমেনশিয়া যা স্মৃতিশক্তি, চিন্তাশক্তি ও দৈনন্দিন কাজের দক্ষতা ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। তবে চিকিৎসকদের মতে, কিছু সাধারণ দৈনন্দিন অভ্যাস পরিবর্তন করলেই মস্তিষ্ককে দীর্ঘদিন তরতাজা রাখা সম্ভব। সঙ্গে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়।
১. নিয়মিত শরীরচর্চা করুনঃ শরীরচর্চা শুধু শরীর নয়, মস্তিষ্কেরও ব্যায়াম। হাঁটা, যোগব্যায়াম, সাঁতার, সাইকেল চালানো-এসব মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়ায়, স্নায়ুকে সক্রিয় রাখে।বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ৩০ মিনিট করে মাঝারি ব্যায়াম করলে বয়সজনিত স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়াকে অনেকটা রোধ করা যায়। অলস জীবনযাপন মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি বাড়ায়। তাই যতটা সম্ভব সক্রিয় থাকুন।
আরও পড়ুনঃ সামান্য বিষয়ে উদ্বেগে ভোগেন? ২ মিনিটের এই সহজ কৌশলেই শান্ত হবে মন
২. মস্তিষ্কবান্ধব খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুনঃ গবেষণায় দেখা গেছে, মেডিটারেনিয়ান ডায়েট (সবজি, ফল, মাছ, অলিভ অয়েল ও বাদামভিত্তিক খাবার) স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে।রেট মিট, চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেলে মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, যা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ডায়েটে রাখুন রঙিন ফল, শাকসবজি, ওমেগা-৩ যুক্ত মাছ ও বাদাম। প্রতিদিন পর্যাপ্ত জল পান করুন।
৩. পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ঘুমানঃ ঘুমের সময় মস্তিষ্ক সারা দিনের ক্লান্তি ও তথ্য ‘গুছিয়ে’ নেয়। কম ঘুম বা খারাপ ঘুমে স্মৃতি ও শেখার ক্ষমতা কমে যায়। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।ঘুমের মান ভাল রাখতে মোবাইল বা টিভি বন্ধ রাখুন, ঘর অন্ধকার ও ঠান্ডা রাখুন, এবং ঘুমানোর আগে ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন।
৪. মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখুনঃ নতুন কিছু শেখা মস্তিষ্কের ব্যায়ামের সমান। নতুন ভাষা, বাদ্যযন্ত্র, পাজল, বই পড়া বা ছবি আঁকার মতো শখ আপনাকে মানসিকভাবে তৎপর রাখে।এছাড়া পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মস্তিষ্কে চাপ বাড়ায় এবং স্মৃতিশক্তি কমায়।
৫. হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ঠিক রাখুন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ কথায় বলে, যত ভাল আপনার হৃদয়, তত ভাল আপনার মস্তিষ্ক। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল ও স্থূলতা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই নিয়মিত রক্তচাপ ও শর্করার পরীক্ষা করুন, ধূমপান বন্ধ করুন এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

৬. শ্রবণশক্তি রক্ষা করুনঃ বয়সের সঙ্গে অনেকের শ্রবণশক্তি কমে যায়। এতে মস্তিষ্ককে শব্দ বোঝার জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। ফলে স্মৃতি ও মনোযোগে ঘাটতি দেখা দেয়। সমস্যা শুরু হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৭. ক্ষতিকর অভ্যাস থেকে দূরে থাকুনঃ ধূমপান রক্তনালীকে সংকুচিত করে, ফলে মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। অতিরিক্ত মদ্যপানও মস্তিষ্কের কোষ ধ্বংস করে। আবার খেলাধুলা বা দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত লাগলেও ভবিষ্যতে ডিমেনশিয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন, সিটবেল্ট ও হেলমেট পরুন এবং নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিন।
৭. জীবনযাপনের সামান্য পরিবর্তনেই বড় সুরক্ষাঃ চিকিৎসকরা বলছেন, ডিমেনশিয়া রোধে ওষুধের চেয়ে বেশি কার্যকর হল সুস্থ জীবনযাপন। নিয়মিত শরীরচর্চা, পুষ্টিকর খাবার, ভাল ঘুম, মানসিক প্রশান্তি ও সামাজিক সংযোগ—এই পাঁচ ভিত্তি মেনে চললেই মস্তিষ্ক অনেক বছর সুস্থ ও সক্রিয় থাকে।
