আয়রন আমাদের শরীরের অন্যতম প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান। এটির অভাবে লোহিত কণিকা তৈরি হতে পারে না। তাই রক্তশূন্যতার অন্যতম প্রধান কারণ আয়রনের ঘাটতি। কিন্তু আয়রন শুধু রক্তকণিকা তৈরি করে না, দেহের শক্তি উৎপাদন থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের স্নায়ুপ্রবাহও নির্ভর করে পর্যাপ্ত আয়রনের উপস্থিতির ওপর। তাই দেহে আয়রনের ঘাটতি হলে দেখা দিতে পারে বহু জটিল সমস্যা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আয়রনের অভাবের কারণে শুধু ক্লান্তি নয়, শরীরে কয়েকটি অস্বাভাবিক পরিবর্তনও দেখা দিতে পারে। যা একেবারেই অবহেলা করা উচিত নয়। তাহলে আয়রনের ঘাটতিতে কোন কোন অস্বাভাবিক লক্ষণ খেয়াল করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন, জেনে নিন- 

আরও পড়ুনঃ মোটাদের চেয়েও মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি অতিরিক্ত রোগা চেহারায়! গবেষণায় উঠে এল ভয়ঙ্কর সতর্কবার্তা

১. জিভ ফুলে যাওয়া ও ব্যথাঃ আয়রনের ঘাটতির কারণে অনেকের জিভ ফোলা, চওড়া হওয়া এবং মসৃণ হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই অবস্থাকে ‘গ্লোসাইটিস’ বলা হয়। এতে কথা বলা বা খাওয়ার সময় ব্যথা ও অস্বস্তি অনুভূত হয়। শুধু তাই নয়, মুখের ভেতর প্রদাহও দেখা দিতে পারে।

২. অদ্ভুত খাবারের প্রতি আসক্তি (পাইকা)ঃ শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকলে অনেকের সাধারণ খাবারের বদলে অদ্ভুত জিনিস খাওয়ার ইচ্ছা হয়। যেমন— বরফ, মাটি, কাগজ বা চক। এই অবস্থাকে ‘পাইকা’ বলা হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শরীর আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে এমন অস্বাভাবিক প্রবণতা তৈরি করে, যদিও এর সঠিক কারণ পুরোপুরি জানা যায়নি।

৩. পায়ে অস্থিরতাঃ আয়রনের ঘাটতি থাকলে রাতে ঘুমানোর সময় অনেকের পায়ে অস্থিরতা দেখা দেয়। রেস্টলেস লেগস সিন্ড্রোম (আরএলএস)-এ আক্রান্ত হলে পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরা, ছলছল ভাব বা অস্বস্তিকর টান অনুভূত হয়, যা ঘুমে ব্যাঘাতঘটায়। আয়রন ডোপামিন উৎপাদনে সহায়তা করে, আর ডোপামিন পেশি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই আয়রনের ঘাটতি থাকলে এই সমস্যা বাড়তে পারে।

আরও পড়ুনঃ প্লাস্টার-অপারেশন নয়, মাত্র ৩ মিনিটে ভাঙা হাড় জোড়া লাগাবে ‘আঠা’! যুগান্তকারী আবিষ্কারে অবাক করলেন বিজ্ঞানীরা

৪. নখ ভঙ্গুর বা চামচের মতো আকৃতিঃ আয়রন ঘাটতির অন্যতম লক্ষণ হল নখ দুর্বল হয়ে যাওয়া ও সহজে ভেঙে পড়া। মারাত্মক ঘাটতির ক্ষেত্রে নখ চামচের মতো বাঁকা হয়ে যায়, যাকে ‘কোয়িলোনাইচিয়া’ বলা হয়। সাধারণত সঠিক চিকিৎসা ও আয়রন সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার মাধ্যমে এই সমস্যা ধীরে ধীরে সেরে যায়।


৫. কানে বাজা বা হিস-হিস শব্দ (টিনিটাস)ঃ শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকলে অনেক সময় কানে বাজনা বা হিস-হিস শব্দ শোনা যেতে পারে। এই অবস্থাকে ‘টিনিটাস’ বলা হয়। এর মূল কারণ হল রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়া, যা শ্রবণশক্তিকে প্রভাবিত করে। দীর্ঘ সময় ধরে এই ধরনের সমস্যা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।