গোপাল সাহা: শিয়রে কড়া নাড়ছে ২৬' এর বিধানসভার নির্বাচন, আর তাকে ঘিরে বঙ্গ রাজনীতিতে আবারো শাসক-বিরোধী তরজা তুঙ্গে, কখনো শাসকের হুশিয়ারি আবার কখনো বিরোধীদের। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে একে অপরকে। কেউ কোন অংশে কোন অবস্থাতেই কম যায় না। একদিকে যেমন বাক যুদ্ধের লড়াই, অপরদিকে হুঁশিয়ারি ও নেহাত কম নয়। আর এই শাসক-বিরোধী হুঁশিয়ারি এবং বাকযুদ্ধ এবার বঙ্গ রাজনীতির পারদ চড়ছে ক্রমাগত।
বলা বাহুল্য, গতকাল শুক্রবার ১৭ ই অক্টোবর শ্রীরামপুরের সংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি রাজ্যের প্রধান বিরোধী শিবির বিজেপির কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারকে চড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দেন। একপ্রকার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন পদ্ম শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারকে। আর তাই নিয়ে বঙ্গ ও রাজনীতিতে রাজনৈতিক সমীকরণ যথেষ্ট উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ওই দু’চারটে সুকান্ত…হাওয়া দিয়ে উড়ে যাবে। আয় না একবার বক্তৃতা দিতে এখানে, তারপর তুই ঘরে ফিরিস কীভাবে দেখব।” এদিনই কার্যত কল্যাণের এমন হুঁশিয়ারির সুর নিয়ে রাজনৈতিক তরজা যথেষ্টই তুঙ্গে ওঠে। বলাবাহুল্য, রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের ঝড় ওঠে। আর এর পরেই কল্যাণের এই মন্তব্যে পাল্টা সুর চড়িয়েছেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা।
উল্লেখযোগ্য বিষয়, কল্যাণের এমন চ্যালেঞ্জকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আজ শ্রীরামপুরে যথারীতি চলে আসেন সুকান্ত। একদিকে যেমন শ্রীরামপুরে সুকান্ত সভা করেন অন্যদিকে বাইক র্যালি থেকে শুরু করে একাধিক কর্মসূচি পালন করেন সুকান্ত মজুমদার। বলাবাহুল্য, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার দলের কর্মীদের এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে বাইক র্যালি করেন বৈদ্যবাটির পথে। একই সাথে দলের বিজয়া সম্মেলনীর অনুষ্ঠান ও সভা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পদ্ম শিবিরের কর্মীদের ঘেরাটোপে।
আরও পড়ুন: ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি! ভারতীয় বিমানবাহিনীর জন্য সামরিক পরিবহন বিমান তৈরি করবে মহিন্দ্রা গ্রুপ
প্রশ্ন উঠছে এখানেই, কল্যাণের হুশিয়ারিতে কি তবে এক প্রকার ভয় পেল কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি সুকান্ত মজুমদার! কারণ কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানিয়েও সুকান্ত তবে কি এক প্রকার ভয় পেয়েই কর্মীদের এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটকে তাকে কর্মসূচি পালন করতে হলো? কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের যদি ভয়ই না পাবেন তাহলে কর্মীদের ঘেরাটোপে এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতে কেন তাকে শ্রীরামপুরে এসে কর্মসূচি পালন করতে হবে। কারণ তিনি কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হলেও একই সাথে তিনি তো পদ্ম শিবিরের বরিষ্ঠ কর্মী।
বলাবাহুল্য, যদি বাংলার শাসক শিবিরের দিকে নজর দেওয়া যায় তাহলে কল্যাণ ব্যানার্জি অথবা অন্যান্য বরিষ্ঠ তৃণমূল নেতাদের নেই কোন কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপ এবং নেই কোনও বিশেষ সুরক্ষা। তারা খুব সাবলীলভাবেই রাজ্য কিংবা রাজ্যের বাইরেও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে চলে যান কোনও রকম কেন্দ্রীয় বাহিনীর সুরক্ষা ছাড়াই। বলা বাহুল্য পূর্বেও বহুবার দেখা গিয়েছে ত্রিপুরাতে তৃণমূল কংগ্রেস সভা করতে গিয়ে বা কোন কর্মসূচি গ্রহণ করলে তাদেরকে ত্রিপুরার সরকারের অর্থাৎ শাসকদলের রোষের মুখে পড়তে হয়েছে এবং একই সাথে চরম অত্যাচারের চিত্রটাও এসছে প্রকাশ্যে। যেখানে আক্রান্ত হতে হয়েছে ত্রিপুরার শাসক শিবিরের কাছে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাকর্মীদের।

যদিও কল্যাণ বলছেন, “ও বলেছিল এসআইআর নিয়ে যাঁরা কিছু করবে তাঁদের সিআরপিএফ দিয়ে গুলি করে মারবে। আমি বলেছিলাম যদি ও গুলি করে মারতে পারে, যদি ওর হিম্মত থাকে তাহলে শ্রীরামপুরে এসে গুলি করে মারুক। তারপরে দেখব ও কী করে ফিরে যায়। ও তাহলে আজকে সিআইএসএফ আর সিআরপিএফ নিয়ে গুলি করে মেরে দেখিয়ে দিক। আমি আবার বলছি ও এটা করে দেখাতে পারলে ওকে শ্রীরামপুর থেকে বের হতে দেব না। আবার চ্যালেঞ্জ দিলাম। আর না হলে আমি ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করে কী করব!”
অন্যদিকে বৈদ্যবাটি পৌঁছাতেই আজ সুকান্তকে ঘিরে দলের কর্মী-সমর্থকদেক ও কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘেরাটোপের মধ্যেই রীতিমতো অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি পালন করেন। রীতিমতো চাপের মধ্যেই পদ্ম শিবির তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। বলা বাহুল্য আজ শনিবারের সুকান্তর এই চ্যালেঞ্জের কর্মসূচিতে পদ্ম শিবিরের কর্মী সমর্থকদের তেমন কোন উচ্ছ্বাস বা জমায়েত দেখা যায়নি। খুব কম সংখ্যক কর্মী সমর্থকরাই এদিনের কর্মসূচিতে এবং বাইক র্যালিতে উপস্থিত ছিলেন। এদিনের চিত্রটা খুব সহজেই বলা যায় যে বঙ্গ পদ্ম শিবির শাসক দলের সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জির চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেও তার মধ্যে চাপ ছিল যথেষ্টই। কারণ পূর্বেও এ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক উঠেছে এবং দলের অন্তরেই বিতর্ক হয়েছে বুথ স্তর বা জেলা স্তরে বিজেপির কর্মী সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ চিত্রটা যথেষ্টই দুর্বল। আর এই সুকান্তকে বিজেপির কর্মীদের দ্বারা কালি মাখা বা জুতার মালা পরানো চিত্রটাও খুব একটা স্বস্তির নয় পদ্ম শিবিরের।
যেখানে অন্যদিকে বাংলা শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নিচুস্তরের কর্মীদের মধ্যে অর্থাৎ গ্রাম থেকে জেলা বা শহরে কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ চিত্রটা যথেষ্টই মজবুত। আর সেই জায়গা থেকে বলা যায় যে বাংলা শাসকদলের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে এখনো সক্ষম নয় বাংলার বিরোধী শিবির অর্থাৎ পদ্ম শিবির। আর আজকের কল্যাণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সুকান্তর কর্মসূচি থেকে স্পষ্ট যে আগামী ২৬' এর বিধানসভা নির্বাচন পদ্ম শিবিরকে কতটা জায়গা দেবে কিংবা শাসকের বিরুদ্ধে লড়াইতে কতটা জায়গা করতে পারবে সেটাই তো বড় প্রশ্নের বিষয়?
এই নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "বিজেপি বাংলায় কোন অস্তিত্ব আছে নাকি যে তারা লড়াই করবে! বাইরে থেকে তারা চারটে লোক ভাড়া করে এনে কর্মসূচি ভরে। আর ভয় পেয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে র্যালি করে আর সভা করে। ২৬' এর বিধানসভা নির্বাচনে এর ফল বুঝতে পারবে, মানুষ এদের পূর্বেও প্রত্যাখ্যান করেছে আবারো করবে এবং ছুড়ে ফেলে দেবে।"
