নিজস্ব সংবাদদাতা: বাংলায় বিজ্ঞাপনের গান, যার পোশাকি নাম 'জিঙ্গল', তার সঙ্গে শ্রাবন্তী মজুমদারের নাম ছিল অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সেটা আটের দশক। তাঁর গলায় "সুরভিত অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম বোরোলীন..." গাওয়া সুর এখনও অমলিন বাঙালির স্মৃতিতে। তালিকায় রয়েছে 'ওয়েসিস'-এর বিজ্ঞাপনের জিঙ্গলও। তবে জিঙ্গল দিয়ে তাঁর পথ চলা শুরু হলেও পরবর্তীতে বাংলা গানের শিল্পী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। শিল্পীর গাওয়া 'আয় খুকু আয়' গানের কলি এখনও আনমনে গেয়ে ওঠে বাঙালি। এবং এই গান গাওয়া, জিঙ্গলের দুনিয়ায় ছুটে চলার পাশাপাশি রেডিওতে গান, নাটকের আসরও জমিয়ে রাখতেন তিনি। এবং সেখানেও শ্রাবন্তী মজুমদার বজায় রেখেছিলেন নিজের স্বাতন্ত্র্যতা।

 

প্রায় এক দশক পর এহেন সংগীত শিল্পীর তিনটি নতুন আধুনিক বাংলা গান মুক্তি পেল। সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার 'ক্যাফে উইশডম ট্রি' রেঁস্তরায় আয়োজন করা হয়েছিল এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। শ্রাবন্তী মজুমদারের গলায় নতুন এইসব আধুনিক বাংলা গান শুনতে পারবেন শ্রোতারা ওঁর অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকেই। গান তিনটি হল -'কি সুন্দর এই পৃথিবী' , 'তার পর ছুটি পাবো', 'দাদু নাতি আর একটি মাছের গল্প'।  

 

 

বহু বছর ধরে বিদেশে রয়েছেন বর্ষীয়ান এই শিল্পী। জানালেন, সঙ্গীতকার সৌম্য দাশগুপ্তর ফোন পেয়ে তাঁর সঙ্গে জুটি বেঁধে এই গানগুলো তৈরি করা। গত বছরই গানগুলো রেকর্ড হয়েছিল। তবে স্রেফ অনলাইনে এই গানের গুচ্ছ প্রকাশ‌ করতে আপত্তি ছিল শিল্পীর। তাই অফ লাইন রিলিজ করার জন্য কলকাতায় ছুটে আসা শ্রাবন্তী মজুমদারের। তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন তাঁর স্বামী কলিন। তবে শুধু গান গাওয়াই নয় এখনও যে তিনি স্টাইল আইকন তা তাঁকে দেখলেই বোঝা যায়। মাথায় ব্যান্ডানা কমলকারি প্রিন্টের শাড়ি পরে হাজির ছিলেন হয়েছিলেন শিল্পী এই অ্যালবামের আনুষ্ঠানিক প্রকাশের অনুষ্ঠানে। যেখানে শিল্পী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দেবজ্যোতি মিশ্র , সৌম্য দাশগুপ্ত , সোমিত্র বসু প্রমুখ।

 

 

অনুষ্ঠানের ফাঁকে শ্রাবন্তী মজুমদার জানালেন, বহুদিন ধরেই তাঁর নতুন গান গাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু কীভাবে করবেন বুঝতে পারছিলেন না। এরপর যোগাযোগ হয় সঙ্গীতকার সৌম্য দাশগুপ্তর সঙ্গে। তারপরেই শুরু হয় এই অ্যালবামের কাজ। তারপরেই খালি গলায় গেয়ে উঠলেন এই অ্যালবামের 'কি সুন্দর এই পৃথিবী' গানটি। জানিয়ে রাখা ভাল, লুইস আর্মস্ট্রংয়ের গাওয়া বিখ্যাত গান 'হোয়াট আ ওয়ান্ডারফুল ওয়ার্ল্ড'-এর সুরের অনুসরণে তৈরি এই গানেও রয়েছে আশার কথা, আলোর কথা, স্বপ্ন দেখার কথা।

 

 

তবে শিল্পী কিন্তু ভাবসাগরে ভাসেন না। তাই তো স্পষ্টভাবে বলতে পারেন, " আমার মনে হয় বাংলা গান এখন প্রায় কেউ শোনেন না। শুনলেও তার চল কম। আর এখন মনে রাখার মতো বাংলা গান হচ্ছেই বা কোথায়? তাই চেষ্টা করলাম যদি মানুষ আমার গাওয়া গানে শোনার মাধ্যমে বাংলা গান ফের শোনেন..." বাংলা বিজ্ঞাপনের জিঙ্গল নিয়েও তাঁর একই মত। সদ্য শহরে পা রেখেছেন। আবহাওয়ার গোলমাল ছুঁয়েছে শিল্পীর গলাতেও। সমস্যা দেখা দিয়েছে গলায়। তবে শ্রোতাদের সঙ্গে নিজের নতুন গান নিয়ে দেখা করতে পারছেন তিনি, এটাই তাঁকে আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি শক্তি জোগাচ্ছে, বক্তব্য তাঁর।

 

বর্ষীয়ান এই শিল্পী সম্পর্কে দেবজ্যোতি মিশ্র বললেন, "শ্রাবন্তী মজুমদারের তুলনা তিনি নিজেই। ওঁর গায়কী, উচ্চারণ, স্বর সবকিছুই স্বতন্ত্র।" এরপর মজার সুরে দেবজ্যোতি বললেন, " শ্রাবন্তীদি আমার নিজের দিদির মতো। আমি তো বলব মেয়েরা যদি ন্যাকামি করতে চায় তার মধ্যেও যেন স্টাইল থাকে, ঠিক শ্রাবন্তদির মতো।" পাশে দাঁড়ানো বর্ষিয়ান শিল্পী হাসতে হাসতে তখন জড়িয়ে ধরেছেন তাঁর এই 'ভাই'কে।