আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকে জনপ্রিয় মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ-এ বড় ধরনের সার্ভার বিভ্রাট দেখা দেয়। এর ফলে সারা ভারতের হাজার হাজার ব্যবহারকারী মেসেজ পাঠাতে কিংবা স্ট্যাটাস আপলোড করতে ব্যর্থ হন। আউটেজ ট্র্যাকার ডাউনডিটেক্টর-এর তথ্য অনুযায়ী, দুপুর ২টা ২০ মিনিটের মধ্যে ৪১০-রও বেশি অভিযোগ নথিভুক্ত হয়। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশ সমস্যা ছিল সার্ভার কানেকশন নিয়ে, ২৪ শতাংশ ব্যবহারকারী হোয়াটসঅ্যাপ ডেস্কটপ সংস্করণে জটিলতার মুখোমুখি হন, আর ২২ শতাংশ অভিযোগ আসে মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারে ত্রুটি নিয়ে।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, সাধারণ সময়ের তুলনায় হঠাৎ করে অভিযোগের সংখ্যা বেড়ে গেলে তবেই তারা এমন সার্ভার বিভ্রাট নিশ্চিত করে থাকে। ঘটনার পরেই বিরক্ত ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দেন। কেউ কেউ মজার ছলে লিখেছেন, “আন্টি-আঙ্কেলরা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ‘গুড মর্নিং’ জিআইএফ পাঠাচ্ছেন— এর চেয়ে বরং ব্যাগ নামিয়ে শুয়ে পড়ি।” অন্যদিকে বহু মানুষ সরল ভাষায় লিখেছেন, “#WhatsAppDown” কিংবা “হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব কাজ করছে না?” — যার জবাবে একাধিক ব্যবহারকারী বিভ্রাটের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন: নেপাল কেন ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম-এক্স-এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, জানুন আসল কারণ
তবে এখনও পর্যন্ত হোয়াটসঅ্যাপের মূল কোম্পানি মেটা এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেয়নি। এটি চলতি বছরের প্রথম বড়সড় বিভ্রাট নয়। এর আগে এপ্রিলে প্রায় কয়েক ঘণ্টা ধরে হোয়াটসঅ্যাপ অচল হয়ে পড়েছিল। তখন ডাউনডিটেক্টরের তথ্যে দেখা যায়, ৮১ শতাংশ ব্যবহারকারী মেসেজ পাঠাতে ব্যর্থ হন এবং ১৬ শতাংশ অ্যাপ ব্যবহারে সমস্যায় পড়েন। ফেব্রুয়ারিতেও আরও ভয়াবহ বৈশ্বিক বিভ্রাটে হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজিং, কলিং এবং ওয়েব সংস্করণ পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে, তখন একসঙ্গে ৯,০০০-রও বেশি অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন ঘন ঘন সার্ভার বিপর্যয় ব্যবহারকারীদের আস্থায় প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত মেটার তরফে সমস্যার প্রকৃত কারণ ও ভবিষ্যৎ প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিয়ে কোনো ঘোষণা আসেনি। ফলে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে — কতটা নির্ভরযোগ্য হোয়াটসঅ্যাপের সার্ভার ব্যবস্থাপনা?
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, হোয়াটসঅ্যাপ শুধু ব্যক্তিগত মেসেজ আদানপ্রদানের মাধ্যম নয়, বরং ছোট ব্যবসা, শিক্ষা কার্যক্রম, এমনকি সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রচারের ক্ষেত্রেও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ফলে সামান্য সময়ের জন্যও এটি অচল হয়ে পড়লে ব্যাপক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় কোটি কোটি ব্যবহারকারীকে। ভারতের মতো দেশে, যেখানে প্রায় প্রতিটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী হোয়াটসঅ্যাপ নির্ভর, সেখানে এমন বিভ্রাটের প্রভাব বহুগুণে বেড়ে যায়।
অন্যদিকে, মেটা তাদের সার্ভার নেটওয়ার্ক ও ব্যাকআপ ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি করছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বারবার এই ধরনের বিপর্যয় ঘটায় অনেকেই বিকল্প প্ল্যাটফর্ম যেমন টেলিগ্রাম বা সিগন্যালের দিকে ঝুঁকছেন। তবে হোয়াটসঅ্যাপের জনপ্রিয়তা এতটাই ব্যাপক যে, কয়েক ঘণ্টার বিভ্রাট তার ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমাতে পারছে না। তবুও বারবার এই ধরনের সমস্যার পুনরাবৃত্তি হলে ব্যবহারকারীদের আস্থা নষ্ট হওয়া অনিবার্য। তাই মেটার উচিত ভবিষ্যতে নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবা নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
