যেখানে খাবার রান্না হয়, সেখান থেকেই পরিবারের স্বাস্থ্যের ভিত্তি তৈরি হয়। তাই রান্নাঘরকে বাড়ির হৃদয় বলা হয়। আমরা সবাই জানি—সবজি কয়েক দিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়, দুধ দ্রুত ফেটে যায় এবং মশলা ধীরে ধীরে স্বাদ হারিয়ে ফেলে। কিন্তু খুব কম মানুষই ভাবে যে রান্নাঘরের বাসনপত্রেরও মেয়াদ ফুরোতে পারে। আপনি যদি  মনে করেন রান্নার কখনও এক্সপায়ার হয় না, তবে তা একেবারেই ভুল। কারণ পুরনো বাসন, বিশেষত কুকার, সময়মতো না বদলালে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর এমনকি বিপজ্জনক রোগের কারণ হতে পারে।

সম্প্রতি মিনিমাল অ্যাকসেস অর্থোপেডিক সার্জন, স্পোর্টস ও এক্সারসাইজ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ মনন ভোরা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি জানান, পুরনো প্রেসার কুকার বাইরে থেকে যতই শক্ত এবং নিরাপদ দেখাক না কেন, ধীরে ধীরে শরীরে বিষ ছড়াতে পারে। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই আলোচনা শুরু হয়েছে—আসলে কখন এবং কেন কুকার বদলানো উচিত?

ডাঃ ভোরার মতে কিছু বিশেষ সংকেত রয়েছে, যেগুলো দেখলেই বুঝতে হবে আপনার প্রেসার কুকার আর ব্যবহারযোগ্য নয়—
যদি কুকার ১০ বছরের বেশি পুরনো হয়, তবে তা অবিলম্বে বদলে ফেলুন।
কুকারের ভিতরেকালো দাগ বা রঙ পরিবর্তন দেখা দিলে বুঝতে হবে, সেখান থেকে বিষাক্ত পদার্থ খাবারে মিশতে পারে।
কুকারের ঢাকনা বা সিটি ঢিলে লাগলে এটি আর নিরাপদ নয়।
রান্না করার পর যদি খাবারে ধাতব স্বাদ পাওয়া যায়, তবে এটি বড় সতর্কবার্তা।
ডাঃ ভোরা স্পষ্ট পরামর্শ দিয়েছেন—এই লক্ষণগুলির যে কোনও একটি দেখা দিলেই নতুন প্রেসার কুকার কেনা সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প।

বেশিরভাগ ভারতীয় বাড়ির বাস্তবতা

ভারতীয় পরিবারে এটা খুব স্বাভাবিক যে পুরনো কুকার প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলে আসে। অনেক সময় বড়রা বলেন—
"এত বছর ধরে চলছে, এখনও চলবে।" কিন্তু নতুন গবেষণা এবং চিকিৎসকরা পরামর্শ একেবারেই অন্য কথা বলছেন। রান্নার হাঁড়ি-পাতিল খাবারের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। সেই কুকার যদি ধীরে ধীরে শরীরের ক্ষতি করে, তবে যতই মজবুত বা টেকসই মনে হোক না কেন, তা ব্যবহার বন্ধ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
পরিবারের নিরাপত্তার জন্য নতুন এবং নিরাপদ বিকল্প বেছে নেওয়াই সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত।

প্রেশার কুকার শুধু রান্নার একটি সামগ্রী নয়, এটি পরিবারের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। পুরনো অভ্যাস বা আবেগের টানে বহু বছর ধরে একই কুকার ব্যবহার করা অনেকের কাছে স্বাভাবিক হলেও, আধুনিক গবেষণা স্পষ্ট জানাচ্ছে—এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই পরিবারের সুস্থতা ও নিরাপত্তার জন্য সময়মতো পুরনো কুকার পরিবর্তন করে নতুন, নিরাপদ বিকল্প ব্যবহার করাই সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত। অবশেষে, খাবারের গুণমান যেমন জরুরি, তেমনি তা রান্না করার পাত্রের নিরাপত্তাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।