আজকাল ওয়েবডেস্ক: আমনজ্যোৎ কৌরের ক্যাচ নতুন জীবন দিয়ে গেল তাঁর ঠাকুমাকে।
আমনজ্যোৎ কৌরের ক্যাচ বিশ্বকাপ তুলে দিল হরমনপ্রীত কৌরের হাতে।
দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক লরা উলভার্ট ভয়ঙ্কর হয়ে ধরা দিয়েছেন তখন। ১০১ রানে ব্যাটিং করছেন। তিনি থাকা মানেই প্রোটিয়া-ব্রিগেডের সাজঘরে জয়ের গন্ধ ঢুকে পড়া।
সেই লরার ক্যাচ একাধিক প্রচেষ্টায় ধরলেন আমনজ্যোৎ। সোশ্যাল মিডিয়া বলছে জাগলিং ক্যাচ। তাঁর ক্যাচ ভারতের জয়ের রাস্তা পরিষ্কার করে দেয়।
তিরাশিতে ৩৩ গজ দৌড়ে ভিভিয়ান রিচার্ডসের ক্যাচ ধরেছিলেন কপিল। ওই ক্যাচ না ধরলে লর্ডসের অলিন্দে বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে ভুবনজয়ীর হাসি হাসতেই পারতেন না কপিল।
একই ভাবে মিলারের ক্যাচ অবিশ্বাস্য ভাবে ধরে রোহিতের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন সূর্যকুমার যাদব। ক্যারিবিয়ান মুলুকে সেদিন ভারতীয় ক্রিকেটের সূর্যোদয় হয়েছিল।
ঠিক তেমনই এই ২০২৫-এর রবিবারে আমনজ্যোৎ কৌর ওই ক্যাচ না ধরলে আজ গোটা দেশের গান হতো না, 'মা তুঝে সালাম।'
আমনজ্যোৎ-এর গল্প চোখে জল আনার মতো। তাঁর গল্প প্রেরণা দেয়। তাঁর গল্প নতুন জীবন দেয়। যেমন তাঁর শয্যাশায়ী ঠাকুরমাকে নতুন জীবন দিয়ে গেল আমনজ্যোতের ক্যাচ।
৭৫ বছরের ভগবন্তী কৌর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন সেপ্টেম্বর মাসে। আমনজ্যোতের বাবা ভুপিন্দর ছুতোর মিস্ত্রি। তিনিই প্রথমে কাঠ কেটে মেয়েকে ব্যাট বানিয়ে দিয়েছিলেন।
৫৪ বছরের ভুপিন্দর বলছেন, ''১ নভেম্বর হাসপাতাল থেকে মাকে বাড়ি নিয়ে এসেছি। আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করি ফাইনাল রয়েছে ২ তারিখ। সেই সময়ে যেন বাড়িতেই থাকে মা। শয্যাশায়ী হলেও মা কিন্তু জ্ঞান হারায়নি। আমরা মা-কে বললাম, তোমার নাতনি বিশ্বকাপ জিতেছে। মা সঙ্গে সঙ্গে চোখ খুলে তাকিয়ে রইল।''
১৫ বছর বয়সে চণ্ডীগড়ের নাগেশ গুপ্তার অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয়েছিলেন আমনজ্যোৎ। গোড়ার দিকে বোলার হিসেবেই ছোট্ট মেয়েটাকে ট্রেনিং দিতেন কোচ নাগেশ। পরে আমনজ্যোৎ হয়ে ওঠেন অলরাউন্ডার।
ভুপিন্দর জানান, তাঁর মা-ই আমনজ্যোৎকে ক্রিকেট খেলার কথা বলেন। রাস্তায় ছেলেদের সঙ্গে আমনজ্যোৎ ক্রিকেট খেলতেন। ঠাকুমা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতেন নাতনির খেলা।
রবি রাতে বিশ্বজয়ের পরে রাত একটা নাগাদ বাড়িতে ফোন করেছিলেন আমনজ্যোৎ। ভুপিন্দর বলছেন, ''মেয়ের বিশ্বজয়ের কাহিনি বাঁচার ইচ্ছা বাড়িয়ে দিয়েছে মায়ের। আমনজ্যোতের সাফল্যের পিছনে আমার মা-ই চালিকাশক্তি।''
আমনজ্যোৎ শুধু ক্যাচ ধরে দেশকে বিশ্বকাপ এনে দিলেন তা নয়, তাঁর ঠাকুমাকেও জীবন দিয়ে গেলেন।
