আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাইরে তখন মুষলধারে বৃষ্টি। থমথমে মুখ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এলেন কার্লেস কুয়াদ্রাত। সাধারণত হাসিখুশি স্বভাবের। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে ভালবাসেন। কিন্তু মরশুম শুরুর ব্যর্থতায় মুখের নকশা বদলে গিয়েছে লাল হলুদ কোচের। আইএসএলের শুরুতেই জোড়া হার। বেঙ্গালুরুর পর কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে। শুক্রবার ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচে নামতে চলেছে ইস্টবেঙ্গল। প্রতিপক্ষ এফসি গোয়া। তবে একেবারেই স্বস্তিতে নেই কার্লেস কুয়াদ্রাত। লাল হলুদ শিবির যেন মিনি হাসপাতাল। সল ক্রেসপোর ডেঙ্গু হয়েছে। চোট রয়েছে দিমিত্রিয়স ডিয়ামানটাকোসের। পাওয়া যাবে না রাকিপকেও। বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনজনই প্র্যাকটিসে হাজির থাকলেও, কেউই মাঠে নামেনি। সম্ভবত জোড়া বিদেশি ছাড়াই গোয়ার কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে লাল হলুদকে। ইস্টবেঙ্গলে সংক্ষিপ্ত কোচিংয়ে এই প্রথম টানা চার ম্যাচে জয় নেই কুয়াদ্রাতের। ডুরান্ড, এএফসি, আইএসএল মিলিয়ে পরপর হারতে হয়েছে। আচমকাই শিবিরের হাসিখুশি পরিবেশ বদলে গিয়েছে। বর্তমানে যথেষ্ট কোণঠাসা কুয়াদ্রাত।

গোয়ার বিরুদ্ধে নামার আগে কতটা চাপে আছেন স্প্যানিশ কোচ? কুয়াদ্রাত বলেন, 'ফুটবলে‌ চাপ থাকে। সব ক্লাবে, যেকোনও পরিস্থিতিতেই থাকে। তাই এটা কোনও সমস্যা নয়। রেজাল্টের ভিত্তিতেই সবকিছু যাচাই করা হয়। আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। কেরলের বিরুদ্ধে আমরাই ভাল খেলেছি। কিছু ভাল মুহূর্ত ছিল ম্যাচে। জানি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রচুর সমর্থক আছে। তাঁরা জয়ের অপেক্ষায়। আগের বছর আমরা মরশুমের শুরুতে এবং শেষে টানা তিন ম্যাচ হারার পর জয়ে ফিরেছিলাম। আশা করছি এবারও প্রত্যাবর্তন করতে পারব।' 

কুয়াদ্রাতের ম্যাচ রিডিং, ফুটবলার পরিবর্তন নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। প্রাক্তন ফুটবলারদের নিশানায় তিনি। ধীরে ধীরে সমর্থকদেরও মোহভঙ্গ হচ্ছে। সবটাই বুঝতে পারছেন কুয়াদ্রাত। কিন্তু কান দিতে চান না। দাবি, শুরুতে এমন হতেই পারে। সবে মাত্র দল গঠনের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কুয়াদ্রাত বলেন, 'আমি জানি না কে কী বলছে। বড় ক্লাবের আশেপাশে এরকম আওয়াজ হয়। লোকেরা কথা বলে। আইএসএলের শুরুটা নিয়ে আমিও খুশি নয়। তবে সবে মাত্র দুটো ম্যাচ হয়েছে। আনোয়ার প্রথমবার খেলল, ইউস্তে দ্বিতীয় ম্যাচে। সবকিছুর একটা সময় লাগে। ভবিষ্যতের দল গঠনের একটা প্রক্রিয়া চলছে। দল এখনও পুরোপুরি তৈরি নয়। সল, দিমির অসুস্থতা এবং চোট আমাদের হাতে নেই। সামনে কঠিন প্রতিযোগিতা অপেক্ষা করছে।' 

গোটা ম্যাচেই যে ইস্টবেঙ্গল খারাপ খেলছে তেমন নয়। কিন্তু দুই অর্ধে পারফরম্যান্সের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। ফিটনেসের অভাব প্রকট। দ্বিতীয়ার্ধে গতি কমে যাচ্ছে ফুটবলারদের। অন্যান্যবারের তুলনায় এবার কিছুটা আগে প্রাক মরশুম প্রস্তুতি শুরু করেছে ইস্টবেঙ্গল। তাসত্ত্বেও মরশুমের শুরুতেই ফিটনেসের হাল শোচনীয়। তবে দলের ফিজিক্যাল ট্রেনারের ওপর দায় চাপাতে চাইলেন না কুয়াদ্রাত। দাবি, চোট-আঘাত তাঁদের হাতে নেই। দুই ম্যাচেই ডিয়ামানটাকোসকে একটু আগেই তুলে নেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। এই প্রসঙ্গে জানান, দিমি এখনও পুরো ফিট নয়। তাঁকে রক্ষা করতেই এটা করতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি। তবে দাবি, গত আইএসএলের সর্বোচ্চ গোলদাতাকে পুরোনো চোট ভোগাচ্ছে না।

কুয়াদ্রাত জানান, এবারের আইএসএলে ৩৩ শতাংশ গোল শেষদিকে হয়েছে। তাই ম্যাচের শেষ কোয়ার্টারে সতর্ক থাকায় বার্তা দেন। শুক্রবার ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে চাইবেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। চার বিদেশিকে পাবেন তিনি। সামনে একা ক্লেইটন সিলভাকে রেখেই শুরু করবেন। রক্ষণে আনোয়ার-ইউস্তে জুটির ওপরই ভরসা রাখবেন? না হিজাজিকে স্টপারে খেলিয়ে ইউস্তেকে ব্যাকে খেলাবেন? এই বিষয়ে একটা ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে ক্রেসপোর অনুপস্থিতিতে মাঝমাঠে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে মাদি তালালকে। বৃহস্পতিবার বিকেলে যুবভারতীর প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডে চূড়ান্ত প্রস্তুতি সারল লাল হলুদ ব্রিগেড। 

ছবি: অভিষেক চক্রবর্তী