আজকাল ওয়েবডেস্ক: শাহরুখ খান অভিনীত জনপ্রিয় 'পাঠান' ছবির বিখ্যাত ডায়ালগ, ''কুর্সি কি পেটি বাঁধ লো, মৌসম বিগড়নে ওয়ালা হ্যায়।''

এবার কি ইস্টবেঙ্গল-ঝড়ঝঞ্ঝায় বিধ্বস্ত হবে দেশের অন্যান্য দলগুলো? ছবিটা কি বদলাবে? দিনের পর দিন ধরে ব্যর্থতা নিত্যসঙ্গী হয়ে যাওয়া ক্লাব কি এবার দিন বদলের ডাক দেবে? কথায় বলে, সকাল দেখে বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে। অন্তত কিছুটা তো বোঝা যায়। 

বুধ-সন্ধ্যার ইস্টবেঙ্গলকে দেখে তাই উপরের কথাগুলো লিখলেও অত্যুক্তি করা হবে না। অনেকেই হয়তো এর সঙ্গে সহমত পোষণ করবেন না। বলবেন, দিলো তো মোটে এক গোল! এখনই এইসব কথা। বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো না! 

নেভিল কার্ডাস তো কবেই স্কোরবোর্ডকে গাধা বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তাই স্কোরবোর্ডে লেখা ইস্টবেঙ্গল ১ নামধারী ০, এই তথ্য দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এই পরিসংখ্যানে কোথাও লেখা নেই ইস্টবেঙ্গল ঝড়ের কথা। কোথাও লেখা নেই নব্বই মিনিটের আধিপত্যের ইতিহাস।  

ম্যাচের খণ্ড খণ্ড ছবিও বর্ণিত নেই। লেখা নেই ইস্টবেঙ্গলের দাদাগিরির কথা। লেখা নেই মিগুয়েলের একের পর এক ব্যর্থ হওয়ার আখ্যান। সব ঠিকঠাক হলে ব্রাজিলীয় তারকা মিগুয়েল একাই হ্যাটট্রিক করতে পারতেন। প্রথম ম্যাচেই হয়ে যেতেন হিরো। শেষমেশ ইস্টবেঙ্গলের সবেধন নীলমনি গোলের পাশে লেখা হল মরোক্কান গোলমেশিন হামিদ আহদাদের নাম। সেই কাঙ্খিত গোল অবশ্য এসেছে দ্বিতীয়ার্ধে। একটা গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘক্ষণ। নায়ক হওয়ার কথা ছিল মিগুয়েলের। কিন্তু ফুটবল দেবতা অন্য কোনও চিত্রনাট্য হয়তো তাঁর জন্য লিখে রেখেছিলেন। তাই বিনোদন দিয়েও, মনোরঞ্জন করেও তিনি গোল করতে পারলেন না। 

আরও পড়ুন: 'মায়ের ভাষা বললেই বাংলাদেশী?', বাঙালির অস্মিতা কি বিপন্ন! যুবভারতীতে গর্জে উঠলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা

কলকাতায় পা রেখেই বসুন্ধরা কিংসের প্রাক্তন তারকা বলেছিলেন, ''আমি এসে গিয়েছি।'' ডুরান্ড কাপে এদিনই তিনি প্রথম মাঠে নামলেন। মাঠে নামার আগে অনেকেই মিগুয়েল সম্পর্কে বলেছিলেন, ''আসল ব্যান্ডমাস্টার তো মিগুয়েলই।''

শুরু থেকে সেই ঝলকই তিনি দেখালেন। নামধারী ম্যাচ তো ট্রেলার। সময় যত এগোবে মিগুয়েল ম্যাজিক ততই জোরালো হবে। প্রথম হাফে তাঁর নামের পাশেই লেখা হয়ে যেত তিন-তিনটি গোল। কখনও পোস্ট, কখনও বার তাঁকে প্রতিহত করল। সল ক্রেসপোর হেড শরীর ছুড়ে বাঁচালেন নামধারী গোলকিপার। প্যালেস্তাইনের তারকা রশিদের শট কোনও ভাবে থামালেন নামধারীর শেষপ্রহরী। 

খেলা দুলকি চালে এগোচ্ছিল। মরশুমের সবে দ্বিতীয় ম্যাচ। খেলোয়াড়রা সবাই নিজেদের সেরা ফিটনেস লেভেলে নেই। যত দিন এগোবে, যত সময় যাবে, ততই খোলস ছেড়ে বেরোবেন ফুটবলাররা। প্রথামর্ধে সুযোগ তৈরির বন্যা বইয়ে দিল ইস্টবেঙ্গল। গোল হয়তো হল না। ভাগ্যদেবী সঙ্গে থাকলে আজ হয়তো গোলের বিবরণ লিখতে লিখতেই প্রতিবেদন শেষ হয়ে যেত।

দ্বিতীয়ার্ধে এল সেই গোল। মরোক্কান হামিদ আহদাদ স্বস্তি এনে দিলেন। প্রথম দিনের অনুশীলনে প্রথম টাচেই গোল করেছিলেন। এদিন প্রথম ম্যাচেই গোল পেলেন তিনি। দিয়ামান্তাকোসের পরিবর্ত হিসেবে নেমেছিলেন হামিদ। মিগুয়েলের ভাসানো কর্নার থেকে তিনি বিষ ঢাললেন হেডে। নামধারী গোলরক্ষক নীরজ কুমার এক্ষেত্রে অসহায়। তার আগে অবশ্য একাধিকবার তিনি ইস্টবেঙ্গলকে থামিয়ে দিয়েছেন। 

১৫ মিনিটে  কাসাব্লাঙ্কা ডার্বির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন হামিদ আহদাদ। ৪-১-এ পিছিয়ে থাকা রাজা কাসাব্লাঙ্কার হয়ে গোল করে এবং করিয়ে সমতা ফিরিয়েছিলেন। সে অবশ্য অনেক দিন আগের কথা। স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে এবার লাল-হলুদে এসেছেন মরোক্কান। যখন গোলের দেখা নেই, গ্যালারিতে সেই জনপ্রিয় গানের লাইন অনুরণিত হচ্ছে, 'গোলের দেখা নেই রে, গোলের দেখা নেই', তখন সেই হামিদই রক্ষাকর্তা। সবে তাঁর গোল পরিক্রমা শুরু হয়েছে। পড়ে রয়েছে গোটা মরশুম। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা চোখ রাখুন হামিদের দিকে। তাঁর গোলের পরেও সুযোগ তৈরি করেছে ইস্টবেঙ্গল, আবার তা নষ্টও হয়েছে। লাল-হলুদ হেডস্যর অস্কার ব্রজোঁ নিশ্চয় তাঁর নোটবুকে সেগুলো লিখে নিয়েছেন। ও, একটা কথা বলাই হল না, ইস্টবেঙ্গল কিন্তু ডুরান্ডের নক আউট নিশ্চিত করে ফেলেছে। 

আরও পড়ুন: ম্যাচের সেরা ফুটবলারকে ঠেলা গাড়ি ভর্তি আলু, এমন অভিনব পুরস্কারের কথা আগে শুনেছেন আগে? ...