ইস্টবেঙ্গল - ০
মহমেডান স্পোর্টিং - ০
সম্পূর্ণা চক্রবর্তী: ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজা মাত্র ইস্টবেঙ্গলের গ্যালারিতে বাজির ফোয়ারা। জ্বলল মশাল। উঠল ক্লাবের নামে জয়ধ্বনি। মাঠের ভেতর তখন ফুটবলার এবং কোচের হার্ডল। তারপর মাঠ প্রদর্শন। ৬১ মিনিট ন'জনে খেলে মিনি ডার্বি ড্র। নৈতিক জয় ইস্টবেঙ্গলের। শনিবাসরীয় রাতে আইএসএলে প্রথম পয়েন্ট এল লাল হলুদ তাঁবুতে। গোলশূন্য ড্র ইস্টবেঙ্গল-মহমেডান ম্যাচ। আধ ডজন হারের পর প্রথম ড্র। তাও আবার ম্যাচের সিংহভাগ সময় ন'জনে খেলে। লিগের তলানিতে থাকা দলের কাছে যা জয়ের সমতুল্য। অন্যদিকে হারের হ্যাটট্রিকের পর পয়েন্ট পেল মহমেডানও। তবে ৬১ মিনিট ন'জনের ইস্টবেঙ্গলকে পেয়ে জয়ে ফেরা উচিত ছিল সাদা কালো ব্রিগেডের। আন্দ্রে চের্নিশভের দলের কাছে এটা আদর্শ মঞ্চ ছিল। কিন্তু মানজোকির কয়েকটা সহজ সুযোগ নষ্টের ফলে নব্বই মিনিটের শেষে গোলশূন্য। মহমেডানের কাছে যা হারের সমান। ম্যাচের আগের দিন সন্দীপ পাতিল, সাব্বির আলির মতো তারকারা দলকে উদ্বুদ্ধ করতে হাজির ছিলেন। কিন্তু তার প্রতিফলন ঘটল না মাঠে। তবে প্রশংসা করতেই হবে ইস্টবেঙ্গলের লড়াকু মনোভাবের। প্রথমদিকে রক্ষণ নড়বড়ে দেখালেও শেষপর্যন্ত ক্লিনশিট রাখতে সক্ষম হন হিজাজি, চুংনুঙ্গারা। তবে সার্বিকভাবে আইএসএলের টেবিলের বারো এবং তেরো নম্বর দলের খেলার মান তথৈবচ। বরং ন'জনে হয়ে যাওয়ার পরও আশা ছাড়েনি লাল হলুদ। লড়াই চালিয়ে যায়।
আক্ষরিক অর্থে প্রথমার্ধেই খেলা শেষ। এক মিনিটের ব্যবধান জোড়া লাল কার্ড। ২৯ মিনিটের মধ্যে দুটো লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন নন্দকুমার এবং মহেশ। দলের দুই সেরা দেশীয় ফুটবলারকে হারিয়ে স্বভাবতই ব্যাকফুটে চলে যায় ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের ২৮ মিনিটে অমরজিৎকে ঘুঁষি মেরে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন নন্দকুমার। তাঁর জার্সি ধরে টানা হয়েছিল। তারই প্রতিবাদে হাত চালান। তার এক মিনিটের মধ্যে জোড়া হলুদ, অর্থাৎ লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন নাওরেম মহেশ। ৭ মিনিটের মাথায় প্রথম হলুদ কার্ড দেখেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের উইঙ্গার। এই অবস্থায় রেফারি হরিশ কুণ্ডুর নাকের ডগায় দাঁড়িয়ে বোতলে শট মেরে হতাশা ব্যক্ত করেন মহেশ। ক্ষমাহীন অপরাধ। একজন পেশাদার ফুটবলার হয়ে কীভাবে এমন ভুল করলেন বোধগম্য নয়। কড়া শাস্তি দেওয়া উচিত ক্লাবের। তবে একইসঙ্গে রেফারির কথাও বলতে হবে। সবে একটি লাল কার্ড দেখানোর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আরও একটি কার্ড নাও দেখাতে পারতেন। সতর্ক করেও হয়তো ছেড়ে দেওয়া যেত। এদিন কিছু ক্ষেত্রে রেফারির সিদ্ধান্ত ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে যায়। ম্যাচের ২১ মিনিটে দিমিত্রিয়স ডিয়ামানটাকোসকে বক্সের ভেতরে ফাউল করেন রেমসাঙ্গা। পেনাল্টির দাবি করেন ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা। কিন্তু ফ্রিকিক নেন রেফারি। বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। মাদি তালালের ফ্রিকিক বাঁচায় মহমেডান গোলকিপার ভাস্কর রায়।
এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে যে দল খেলিয়েছিলেন, সেই দলে একটি পরিবর্তন করেন অস্কার ব্রুজো। হেক্টর ইউস্তের চোটের জন্য প্রথম একাদশে সুযোগ পান মহম্মদ রাকিপ। বাকি দল একই। ফরমেশনেও কোনও পরিবর্তন নেই। দুই দলের কাছেই প্রত্যাবর্তনে লড়াই ছিল। তাই তেড়েফুঁড়ে শুরু করে ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডান। শুরুর দিকে আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করছিল কলকাতার দুই প্রধান। কিন্তু সেই অর্থে কোনও ওপেন সুযোগ নেই। প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটা হাফ চান্স তৈরি হয়। কিন্তু গোল করার মতো জায়গায় পৌঁছতে পারেনি কোনও দলই। প্রথম ৪৫ মিনিট মহমেডানের হয়ে কিছুটা নজর কাড়েন অ্যালেক্সিস গোমেজ। কিন্তু বিরতিতে আর্জেন্টাইন মিডিওকে তুলে নেন আন্দ্রে চের্নিশভ। তাতেই সাদা কালো শিবিরের ছন্দপতন ঘটে। পরিবর্ত ফুটবলার মানজোকি খান দুয়েক নিশ্চিত সুযোগ নষ্ট করেন। দ্বিতীয়ার্ধে ইস্টবেঙ্গলের মাত্র একটি সুযোগ। মাদি তালালের শট বাঁচান মহমেডান কিপার।
