কৃশানু মজুমদার: আশিয়ান কাপের সময়ে তাঁর গলায় বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিল 'কুছ কুছ হোতা হ্যায়' গান। সম্প্রতি মোহনবাগানের প্রাক্তন ফুটবলার লালম পুইয়াকে পাশে নিয়ে সেই তিনিই দারুণ সুরেলা গলায় গেয়ে উঠলেন, 'কেয়া কোরু হায়, কুছ কুছ হোতা হ্যায়'। সেই গানের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে

তিনি সুলে মুশা। নতুন করে পরিচয় দেওয়ার কোনও প্রয়োজন আছে কি? ইস্টবেঙ্গলের আশিয়ান-জয়ের অন্যতম নায়ক। লাল-হলুদের প্রাক্তন ডিফেন্ডার তাঁর ভ্রাতৃপ্রতিম সৌভিক চক্রবর্তী, এডমুন্ড, আনোয়ারদের সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, ''মনে রেখো, তোমরা আজ সেমিফাইনাল খেলতে নামছো। আজকের ম্যাচ কিন্তু মোহনবাগান-ম্যাচের থেকেও কঠিন হবে। ডার্বিতে যে স্পিরিট, যে ইচ্ছাশক্তি, যে লড়াইয়ের মানসিকতা দেখিয়েছো সবাই, আজও সেরকমই দেখাতে হবে। ডায়মন্ড হারবার জানে ওরা ইস্টবেঙ্গলের থেকে দুর্বল। ওরা কিন্তু জানপ্রাণ লড়িয়ে দেবে। পুরো নব্বই মিনিট মনোসংযোগ করবে। শুরুতেই গোল তুলে নিয়ে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়িয়ে দিও। ইস্টবেঙ্গল হার না মানা মনোভাবের জন্য বিখ্যাত। তোমাদের চোয়াল চাপা লড়াই সফল হবেই, এই বিশ্বাস আমার আছে। জিতে ফিরে আসো''

আরও পড়ুন: গোল পেলেন এমবাপে, জয় দিয়ে লা লিগা অভিযান শুরু রিয়ালের

সুলে মুশা মানে লড়াইয়ের মন্ত্র। সুলে মুশা মানে আশিয়ান কাপের সেই চোয়াল চাপা লড়াইসুলে মুশা মানে ময়দানের মিথতখন চিমা-রাজ কলকাতার ফুটবলে। মোহনবাগান জার্সি পিঠে প্রতিটি ডার্বির আগে হুঙ্কার দিতেন নাইজেরিয়ান সিংহ। 

ঘানা কাঁটা দিয়ে নাইজেরিয়ান চিমাকে বশ করার জন্য স্বপন বল নিয়ে এসেছিলেন মুশা, জ্যাকসন ও ওপোকুকে। তাঁরা মাঠে নামতেই লাল-হলুদ গ্যালারি থেকে ধ্বনি ওঠে, "আইলো ঘানা, চিমা কানা।" চিমা-রাজের পরিবর্তে ময়দানে শুরু হয় ঘানা-রাজ।

ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন অধিনায়ক সুলে মুশা বলছেন, ''গতবার আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের দুটো ম্যাচ দেখার জন্য যুবভারতীতে গিয়েছিলাম। দুটো ম্যাচেই হেরে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। নিজের উপরই আমার লজ্জা হয়েছিলভাবছিলাম, কোথায় গেল সেই ইস্টবেঙ্গল? কোথায় সেই লড়াই, লড়াই আর লড়াই? তবে এবারের দলটা বেশ ভাল। দলে ভাল খেলোয়াড় রয়েছে। এই মরশুমে ভাল করবে ইস্টবেঙ্গল বলেই মনে হচ্ছে। এগিয়ে যাও তোমরা''

তাঁর কথা শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল প্রাক্তন লাল-হলুদ অধিনায়ক বোধহয় দলের দ্বাদশ ব্যক্তি। মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় দাদার মতো ছোট ভাইদের ক্রমাগত উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। ইস্টবেঙ্গলে খেলার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলছেন, ''এই ক্লাবে খেলা সহজ ব্যাপার নয়। প্রতিভার সঙ্গে লড়াকু মানসিকতা থাকতে হবে। তবেই এই ক্লাবে সাফল্য পাওয়া যায়।''

২০০৩ সালে ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়ক হন মুশাআশিয়ান কাপের সেমিফাইনালে মারাত্মক চোট পেয়েছিলেন। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিলেন ফাইনালে। কিন্তু তিনি তো পুরোদস্তুর টিমম্যান। দলের স্বার্থ সবার আগে। কোমরে বেল্ট পরে নেমে পড়েছিলেন মাঠে। তার পরের ঘটনা ইতিহাস।

নিজের অফুরন্ত অভিজ্ঞতা থেকে অস্কারের দলকে পরামর্শ দিয়ে সুলে মুশা বলছেন, ''ফুটবলে অনেক কিছুই ঘটে। ভাল খেলেও অনেক শক্তিশালী দল ম্যাচ হেরে যায়। আবার খারাপ খেলেও ম্যাচ জিতে যায়। সবটাই নির্ভর করে স্ট্র্যাটেজির উপর। আমি একটা কথাই বলবো, হালকা ভাবে নিও না কোনও ম্যাচ। নিজের উপরে বিশ্বাস থাকুক ষোলো আনা। আত্মবিশ্বাস তোমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। গুড লাক টিম''

ডার্বি জিতে টুর্নামেন্ট থেকে মোহনবাগানকে ছিটকে দিয়ে ফুটতে শুরু করেছে ইস্টবেঙ্গল। এমন ইস্টবেঙ্গলকে বহুদিন দেখা যায়নিঝিমিয়ে ছিল লেসলি ক্লডিয়াস সরণীর শতাব্দী প্রাচীন বটবৃক্ষ। রক্তের গতি হঠাৎই বেড়ে গিয়েছেসুলে মুশা ফিরে যাচ্ছেন পিছনের সময়ে। বলছেন, ''শুনুন এজেন্ট রাজ ফুটবলের ক্ষতি করে দিচ্ছে। ভিডিও দেখে খেলোয়াড় বাছতে বসলে পস্তাতেই হবে। ভিডিও এডিট করা যায়। কিন্তু নব্বই মিনিট ধরে একজন কেমন খেলছে, কেমন গোল করছে, ম্যাচের উপরে তাঁর কতটা অবদান, সেগুলো খতিয়ে দেখে ফুটবলার নির্বাচন করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে'' ঘানার থ্রি মাস্কেটিয়ার্সকে যেভাবে ইস্টবেঙ্গলে আনা হয়েছিল, সেই ইঙ্গিতই হয়তো দিলেন মুশা। 

No photo description available.

বুধ-সন্ধ্যার যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গল-ডায়মন্ড হারবার সেমি যুদ্ধ তিনি ঘরে বসেই দেখবেন। সুর-তাল-ছন্দ মিলে মিশে প্রিয় দল গান ধরছে ফুটবল মাঠে। মুশার মেজাজও ফুরফুরে। বলছেন, ''এখন অফিসে আছি, তাই গান গাইতে পারছি না। একদিন আসুন নিশ্চয়ই গান শোনাবো'' আজ ইস্টবেঙ্গল জিতলে তিনি যে গান গাইবেন, এ কথা বলাই বাহুল্য।

 

আরও পড়ুন: 'ইস্টবেঙ্গলে গিয়েছে বলে খুশি, মোহনবাগানে গেলে কষ্ট পেতাম', লাল-হলুদের সেনসেশনকে নিয়ে বিস্ফোরক