কৌশিক রায়: ইস্টবেঙ্গলের ঐতিহাসিক টানা আট বার লিগ জয়ের পিছনে ছিল তাঁর বিরাট ভূমিকা। একটু ঝুঁকে পড়ে হাঁটতেন। গোটা মাঠ জুড়ে ছিল তাঁর খেলা। প্রাণশক্তিতে ভরপুর ছিলেন তিনি।
এতপর্যন্ত পড়ার পরে অনেকেই কৌতূহলী হয়ে উঠতে পারেন। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কে এই ফুটবলার? কার কথা বলা হচ্ছে? তিনি আল আমনা। একসময়ের ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠের 'হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা' তিনি।
সেটা ২০১৭। কেবল ড্র করলেই ইস্টবেঙ্গল কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে। এই অবস্থায় মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল।
বারুদে ঠাসা সেই ম্যাচের ফলাফল হয়েছিল ২-২।
আজহারউদ্দিন মল্লিকের গোলে শুরুতেই এগিয়ে গিয়েছিল সবুজ-মেরুন শিবির। বিরতির ঠিক আগে রালতে সমতা ফেরান ইস্টবেঙ্গলের হয়ে।
আরও পড়ুন: ভারতকে হারানোর জন্য বাইরে থেকে আক্রমের চাল, আফ্রিদির জন্য কিংবদন্তির পরামর্শ ...
বিরতির পরে আনসুমানা ক্রোমা ২-১-এ এগিয়ে দেন মোহনবাগানকে। ৬৬ মিনিটে আল আমনা ২-২ করেন। পেনাল্টি থেকে গোল করেছিলেন আমনা। তার পরে হোটেল চলে উদযাপন।  ৮ লেখা কেক কেটেছিলেন লাল-হলুদ অধিনায়ক অর্ণব মণ্ডল। যদিও সেই ডার্বিতে তিনি নামেননি। 
 
  
 
  কাট টু ২০২৫। আজ সোমবার ইউনাইটেড স্পোর্টসকে মাটি ধরিয়ে ৪১-বার কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হল লাল-হলুদ শিবির। 
ট্রফি বুভুক্ষু লেসলি ক্লডিয়াস সরণীর ক্লাবে এল খেতাব। লাল-হলুদ ভক্তরা উদযাপনে ব্যস্ত। জ্বলে উঠেছে মশাল। আর তিনি কলকাতা থেকে বহু দূরে। লাল-হলুদের মাঝমাঠের একসময়ের প্রাণভোমরা আজকাল ডট ইন-কে মিশর থেকে বলছেন, ''ইস্টবেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আপনার কাছেই শুনলাম। খুব ভাল লাগল। ওদের অভিনন্দন জানাই।''
খালিদ জামিলের হাতে তখন ইস্টবেঙ্গলের রিমোট কন্ট্রোল ছিল। তার আগে আইজলকে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন ভারতীয় ফুটবলের বর্তমান হেডস্যর। খালিদের হাতের সেরা তাস ছিলেন সিরিয়ান আমনা।
ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার অর্ণব মণ্ডল এত বছর পরেও আমনার স্মৃতিতে ডুব দিচ্ছেন। বলছেন, ''চমৎকার বল কন্ট্রোল ছিল। দুর্দান্ত পাস বাড়াত। বল হোল্ডিং ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। পারফেক্ট নাম্বার টেন বলতে যা বোঝায়, আল আমনা ছিল তাই।''
আজকের সময়ে আমনা খুব সহজেই আইএসএল খেলতে পারতেন বলে মনে করেন অর্ণব। এই লাল-হলুদের নিশ্চয় একজন আল আমনাকে দরকার।

একসময়ের মাঝমাঠের জেনারেল কি এখনও বলকে কথা বলান? এখনও কি গোলের গন্ধ মাখা পাস বাড়াতে পারেন? তিনি হেসে বলছেন, ''এখন ফুটবল খুব বেশি খেলা হয় না। মাঝেমধ্যে খেলি।''
ডার্বি নতুন তারার জন্ম দেয়। ডার্বিতেই আবার তারা খসে যায়। ডার্বিতে গোল করলে ভক্তদের স্মৃতির মণিকোঠায় চিরকাল থেকে যান সংশ্লিষ্ট ফুটবলার। আমনাও সেরকমই একজন। শুধু গোল করার জন্য নয়, সব মিলিয়ে দৃষ্টিনন্দন ফুটবল উপহার দেওয়ার জন্য আল আমনা এখনও ভক্তদের স্মৃতিতে ঢেউ তোলেন। ফুটবলপাগলরা বলেন, একটু বেশি বয়সে তিনি ইস্টবেঙ্গলে এসেছিলেন। আবার তাঁর পায়ের কাজে মজে যাওয়া ভক্তরা আবির দিয়ে তাঁকে রাঙিয়ে দিয়েছিলেন কলকাতা লিগ জয়ের পরে।
পুজোর ঠিক আগে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে এল খেতাব। লাল-হলুদ ভক্তরা আনন্দে উদ্বেল।

আট বছর কম সময় নয়। মাঝে গঙ্গা দিয়ে গড়িয়ে গিয়েছে অনেক জল। কিন্তু আমনা রূপকথা কি ভোলা যায়? দুর্গাপুজোর কলকাতা তাঁকে এখনও নিশ্চয় ছুঁয়ে যায়। একসময়ে দুই মেয়েকে নিয়ে উৎসবের কলকাতায় ছিলেন আমনা। এখন তিনি এই শহর থেকে অনেক দূরে। প্রাক্তন দলের খেলা কি দেখেন আমনা? তিনি কি হয়ে পড়েন নস্ট্যালজিক? আমনা বলছেন, ''এখন আর ইস্টবেঙ্গলের খেলা বেশি দেখা হয় না। তবে ইস্টবেঙ্গল কলকাতা লিগ জিতেছে জেনে খুব ভাল লাগল।''
ফুটবলার আসে, ফুটবলার যায়। ইস্টবেঙ্গল আর আমনার আখ্যান যেন বিখ্যাত গানের সেই লাইন, 'হৃদয়ে লেখো নাম সে নাম রয়ে যাবে।'
আরও পড়ুন: শুভমান গিল নাকি কেএল রাহুল, কে হবেন অধিনায়ক? ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের দল ঘোষণা হবে এই দিনে...
