আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২ নভেম্বরের রাত। গোটা দেশকে মুহূর্তে বিশ্বজয়ের স্বাদ এনে দিয়েছেন তাঁরা। তারপর থেকে নানা আলোচনা, উচ্ছ্বাসের  মাঝেও, আলোচনা বলা ভুল, খানিকটা আর্জি বলা যেতে পারে, আর্জি ছিল, এবার যেন 'ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল'-এর বদলে সগর্বে উচ্চারণ করা হয়, 'ভারতীয় ক্রিকেট দল'। প্রথম বাঙালি বিশ্বকাপ জয়ী হিসেবে রিচা ঘোষ যেন পান প্রাপ্য সম্মানের সবটুকু, যেন এবার থেকে আর মেয়েদের বলা না হয়, এত রাতে বাইরে কী করছিলে? মোটের উপর আর্জি ছিল, যাঁরা বিশ্ব জয় করেছে, তাঁদের যেন ঠিক দু'দিন পরে ভুলে না গিয়ে, 'স্রেফ মেয়ে' হিসেবে বিচার না করা হয়। আলোচনা হয়েছে ম্যাচের  মাঠ পাওয়া নিয়েও।

আর্জি, অনুরোধ বদলে গেল যেন পরের দিনেই। যেন উচ্ছ্বাসের পরের রাতেই ফিরল ছাইচাপা হতাশা। ভারতীয় মহিলা বিশ্বকাপজয়ী দল এবং সাপোর্ট স্টাফদের জন্য বিরাট অঙ্কের নগদ পুরস্কার ঘোষণা করেছে বিসিসিআই। অঙ্কটা বিরাট, কিন্তু সেই অঙ্কেই যেন বৈষম্য লুকিয়ে বিশাল হারে। বিসিসিআই সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া খেলোয়াড় এবং সাপোটর্ট স্টাফদের জন্য ৫১ কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। অঙ্ক বড় নিঃসন্দেহে। কিন্তু ওই যে সমতার আর্জি, সমান সম্মানের আর্জি? তা কি ভেঙে গেল পরের সকালের এই ঘোষণাতেই? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পর ১২৫ কোটি পেয়েছিল রোহিতরা। হরমনদের কত দিল বোর্ড? অর্ধেকের চেয়েও কম।

অর্থাৎ, টাকার অঙ্ক ঘোষণা করে সেই চিরাচরিত বৈষম্যের ছবিই প্রকট করে দিল বোর্ড। সেই আমরা-ওরা-র বিভাজন। হরমনপ্রীত ও তাঁর মেয়েরা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেশকে এনে দিয়েছেন বিশ্বকাপ। মুগ্ধতা ছড়িয়ে রয়েছে সর্বত্র। তার পরেও বোর্ডের টাকার অঙ্কে এত পার্থক্য কেন? কোথাও কি নিরুচ্চারে বোর্ড বলে দিচ্ছে, ছেলে আর মেয়েদের বিশ্বকাপ জয়ের মধ্যে জমিন-আসমান পার্থক্য! কোথাও কি এগিয়ে রাখা হচ্ছে ছেলেদের? যুগ-যুগান্ত ধরে চলে আসা বৈষম্যের দেওয়াল ভাঙবে কবে তাহলে? গতকাল রাতে রোহিত শর্মা স্ট্যান্ডে ছিলেন। বছর দুয়েক আগে তাঁর স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল আহমেদাবাদে। হরমনপ্রীত যখন দু'হাত ছড়িয়ে দিয়ে পাখির মতো উড়ে চলেছেন মাঠে, তখন ক্যামেরা প্যান করে ধরল রোহিতকে। তাঁর চোখে জল। এই জল তো বেদনা-যন্ত্রণা, না-পাওয়ার হতাশা ভুলিয়ে দেওয়ার। তবুও কি মন গলল না বোর্ডের? কোথাও কি খাটো চোখে দেখা হল হরমনপ্রীতদের বিশ্বজয়কে?