আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১৪০ কোটি ভারতবাসীর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করেছেন তিনি। নিশ্চিত সোনা থেকে বঞ্চিত করেছেন ক্রীড়াক্ষেত্রে দেশের আইকন নীরজ চোপড়াকে। অলিম্পিকে ব্যক্তিগত ইভেন্টে পাকিস্তানের হয়ে প্রথম সোনা জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন আরশাদ নাদিম। অথচ নীরজের মতো সেরা প্রযুক্তি, পরিকাঠামোয় প্রস্তুতির সুযোগ পাননি। কয়েকদিন আগে দু'বেলা পেট ভরে খেতেই পেতেন না। আজ তিনি রেকর্ড থ্রোয়ে জ্যাভলিনে চ্যাম্পিয়ন। তবে পাকিস্তানের মতো দেশ থেকে এতটা পথ পেরিয়ে এই পর্যন্ত আসা মোটেই সহজ ছিল না। এবার প্যারিস অলিম্পিকে সাতজনকে পাঠায় পাকিস্তান। তাঁদের মধ্যে থেকে কাকে সম্পূর্ণ স্পনসর করা হবে সেই নিয়ে একটা সময় দ্বিধায় ছিল পাকিস্তানের জাতীয় স্পোর্টস বোর্ড। তবে শেষপর্যন্ত আরশাদ নাদিম এবং তাঁর কোচ সলমন ফৈয়াজ বাটকে স্পনসর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একমাত্র দু'জনের প্যারিস যাওয়ার টিকিট স্পনসর করে বোর্ড। বাকিদের নিজের টিকিট নিজেদেরই কাটতে হয়। সেই প্রতিদান দিলেন ২৭ বছরের অ্যাথলিট। 

খানেওয়াল গ্রামের ছেলে নাদিম। যা একসময় পাঞ্জাবের মধ্যে পড়ত। গরীব ঘরের ছেলে। তাঁর বাবা নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন। সাত ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় নাদিম। একসময় পছন্দসই খাবারও জুটত না তাঁদের। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন তাঁর বাবা। বছরে মাত্র একবার মাংস জুটত তাঁদের কপালে। সেটা ইদের দিনে। একসময় জ্যাভলিন কেনার জন্য নাদিমের কাছে টাকা ছিল না। তারওপর একাধিক চোট-আঘাতে জর্জরিত ছিলেন। সেই জায়গা থেকে অলিম্পিকে সোনা। কুর্নিশ জানাতেই হবে নাদিমকে। সারা জীবনের কষ্ট, সংগ্রাম মাত্র একটা থ্রোয়েই ভুলিয়ে দেন ৬ ফুট ৩ ইঞ্চির পাকিস্তানি অ্যাথলিট। আগের ৯০.৫৭ মিটারের অলিম্পিক রেকর্ড ভেঙে নতুন নজির গড়েন। ছেলে ফাইনালের যোগ্যতা অর্জন করার পর তাঁর বাবা মহম্মদ আশরাফ জানিয়েছিলেন, 'মানুষের ধারণা নেই আরশাদ এই জায়গায় কীভাবে পৌঁছেছে। গ্রামের লোকজন, আত্মীয়স্বজনরা আর্থিক সাহায্য করত। যাতে ও বিভিন্ন শহরে গিয়ে ট্রেনিং করতে পারে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে।' 

এবার প্যারিস অলিম্পিকে সাতজনকে পাঠায় পাকিস্তান। তারমধ্যে ছ'জন তাঁদের সংশ্লিষ্ট ইভেন্টে ফাইনালের যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। পরপর দু'বার অলিম্পিকের ফাইনাল রাউন্ডের যোগ্যতা অর্জন করার পর বাড়িতে উৎসবে মাতেন নাদিমের পরিবার। তাঁর বাবা-মা পাড়ায় মিষ্টি বিতরণ করেন। সেদিন তাঁর বাবা মহম্মদ আশরাফ বলেছিলেন, 'আমার ছেলে যদি পাকিস্তানের হয়ে অলিম্পিক পদক আনতে পারে, সেটা আমাদের এবং আমাদের গ্রামের জন্য সবচেয়ে গর্বের মুহূর্ত হবে।' তাঁদের জন্য সেই মহেন্দ্রক্ষণ এসে গিয়েছে। টোকিও অলিম্পিকে পঞ্চম স্থানে শেষ করেন নাদিম। প্যারিসে যোগ্যতা অর্জন পর্বেও নীরজের পেছনে ছিলেন। কিন্তু ফাইনালে বাজিমাত। এবার কি ক্রিকেট ছেড়ে জ্যাভলিনে ফোকাস করার সময় হয়ে গিয়েছে পাকিস্তানের জাতীয় স্পোর্টস বোর্ডের?